BMBF News

কথিত সাংবাদিক এরশাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

টাঙ্গাইরের মির্জাপুর থানার কথিত সাংবাদিক এরশাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। মির্জাপুরের এক ব্যবসায়ী মামুন মিয়ার কাছে সম্প্রতি পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এস এম এরশাদ। চাঁদা দিতে রাজি না হলে তাকে বিভিন্নভাবে হামলা-মামলার ভয়-ভীতি দেখান কথিত এই সাংবাদিক। ঘটনার শুরু ঠিক এক বছর আগে। কাঁচামাল ব্যবসায়ী মামুন মিয়ার কাছে গত বছর ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এই সাংবাদিক। মামলার এজাহারে উল্লেখ্য, মামুন মিয়াকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় তাকে মির্জাপুর বাজারে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। চাঁদা দিতে রাজি না হলে এরশাদ তার সঙ্গে আরও কয়েক জন সন্ত্রাসী নিয়ে মামুন মিয়ার দুই ছেলের ওপর আক্রমণ করেন এবং তাদের জখম করে আহত করেন। পরবর্তীতে তার দোকান থেকে টাকা-পযসা লুট করেন এরশাদ। এ বিষয়ে এরশাদ সহ আরও কয়েকজনকে আসামী করে মির্জাপুর থানায় গত বছর ২০ মে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যাহার জি.আর নং-১০৪-২০২৩ সন, ধারা- ১৪৩, ৩৪১, ৩২৩, ৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ৩৭৯ ও ৫০৬। বর্তমানে এই মামলা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মির্জাপুর থানা আমলী আদালতে চলমান রয়েছে। এর ঠিক দুদিন পর বাদিপক্ষকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য আবারও হামলা করে। যার প্রেক্ষিতে উক্ত আসামীগণের বিরুদ্ধে গত বছর ২৬ জুন বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ‘ক’ অঞ্চল আদালতে একটি পিঃ মোঃ নং-৭৬৫/২০২৩নং যার ফৌজদারি কার্যবিধি ১০৭/১১৪/১১৭(গ) ধারায় মোকাদ্দমা দায়ের করলে আদালতে তারা বন্ড প্রদান করেন। এরপর চলতি বছরের ৬ এপ্রিল এস এম এরশাদ আবারও মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে মামুন মিয়া বলেন, আমাকে একের পর এক হুমকি দিয়ে আসছে তারা। আমাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য তারা চাপ প্রয়োগ করছে। কিন্তু আমি মামলা তুলে নিতে রাজি না হলে আমাকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয় তারা। এবং কি আমাকে মারার হুমকিও দিয়েছে কয়েক বার।
এ বিষয়ে কথিত সাংবাদিক এরশাদ তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্য বলে দাবি করেছেন।
এদিকে গত কয়েক বছরে কতিথ সাংবাদিক বনে গেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। গত ৮-১০ বছর আগেও যার ছিল শুধু মাত্র একটি টিনের ঘর। তখন শুধু তার বাবার ৪শতাংশ জমির ওপর একটি টিনের ঘর ছিল। সেখান থেকে এখন তিনি প্রায় হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তির মালিক। তার কোনো ব্যবসা কিংবা অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই। নিজ বাড়িতে তিনি ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। বসত বাড়ির সামনেও তার কেনা জমি আরও এক শতাংশ। বসত বাড়ির পাশে পুকুরে আরও প্রায় ৭-৮ শতাংশ জমি তিনি ক্রয় করেছেন। নিজের আত্মীয়-স্বজনদের জিম্মি করেই তিনি এসব জমি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ। মির্জাপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডে দুটি প্লট ক্রয় করেছেন এরশাদ। তার পাশে রয়েছে আরও ১০ শতাংশ জমি। সেটিও তিনি ক্রয় করেছেন। বিগত কয়েক বছর আগে মির্জাপুর পৌরসভার বাইমহাটি এলাকায় প্রায় ৮ শতাংশের একটি বসত বাড়ি তিনি জবরদখল করেছিলেন। ধরা খাওয়ার ভয়ে এখন তিনি অনেক জমি বিক্রিও করে দিয়েছেন। সম্প্রতি মির্জাপুর বাজারের ডাকবাংলো আবাসিক ভবনের সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রায় ৩০ কোটি টাকার জমি বেদখল করেন এরশাদ। জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পোষ্টকামুরী মৌজায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের এসএ ৬০৭ বিআরএস ৮৯২ দাগের ১ নং খতিয়ানে ৮৩ শতাংশ ও এসএ ৬০৮, বিআরএস ৮৯১ দাগে ১২ শতাংশ সহ মোট ৯৫ শতাংশ জমি তিনি বেদখলে নিয়েছে। মির্জাপুর পৌর ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা আদাসুজ্জামান এ বিষয়ে বলেছেন, ভুল বুঝিয়ে ডাকবাংলোর সীমানাপ্রাচীরের বাইরের জমি দেখিয়ে ভিতরের ৬০৮ দাগের ৬ শতাংশ জমি খারিজ করে নিয়েছিল।
মির্জাপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী শামীম হোসাইন বলেছেন, এর আগেও একটি চক্র ডাকবাংলোর জায়গায় অবৈধভাবে কাজ করতে চেয়েছিল।
এরশাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, মির্জাপুরের মা সিনএনজি পাম্প থেকে তিনি প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করেন। বহুরিয়া রোডের একটি পেপার’স মিল থেকেও তিনি চাঁদা নেন। অত্র মির্জাপুরের যেখান থেকেই বালু উত্তোলন করা হয় না কেন, সেখান থেকেই তিনি চাঁদা দাবি করেন।
জানা গেছে, বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের সনামধন্য দৈনিক কালের কণ্ঠ এবং জাগো নিউজ অনলাইন পোর্টালের মির্জাপুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। এস এম এরশাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। জানা গেছে, তিনি এসএসসি পাশ করতে পারেননি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন কি না তা নিয়েও রয়েছে বেশ সন্দেহ। পরবর্তীতে তিনি উম্মুক্ত থেকে পড়াশুনা করেন। মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে সার্টিফিকেট কেনার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে তিনি মির্জাপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদাবাজি করেন। বর্তমানে তিনি মির্জাপুর প্রেসক্লাবের সদস্য। এসব পত্রিকায় উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করলে কোনো পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না, প্রতিনিধিরা শুধু বিজ্ঞপনের একটি অংশ পেয়ে থাকেন। তবে এরশাদ কীভাবে এক কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন!