দেশের দুই প্রান্তে পৃথক সহিংস ঘটনায় আজ রোববার (রক্তাক্ত) দিন পার হলো। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। একই দিনে খুলনায় আদালত চত্বরেই দুর্বৃত্তদের নৃশংস হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও দুজন। সব মিলিয়ে রোববারের এই সহিংসতায় ঝরে গেল ৫টি প্রাণ।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় মাত্র ১৬ শতক জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরও পাঁচজন।
রোববার (আজ) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের চিলাখানা গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের ১৬ শতক জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে সকালে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই রক্তগঙ্গা বয়ে যায়। সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- আলতাফ (৫০), এরশাদ (৩৫) এবং কুলসুম বেগম (৫০)। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দুপুর ১২টার দিকে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বরে ঘটে আরেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। সেখানে দুর্বৃত্তদের হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- ফজলে রাব্বি রাজন এবং হাসিব। তারা দুজনেই সোনাডাঙ্গা থানার একটি অস্ত্র মামলার আসামি ছিলেন এবং আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জামিনে থাকা রাজন ও হাসিব আদালতে হাজিরা দিয়ে আদালত ফটকের সামনে মোটরসাইকেল রেখে চা পান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত হেঁটে এসে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। খুলনা সদর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম এবং হাসপাতালের ইএমও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশেই যেন অপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। জমি নিয়ে বিরোধে লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষ কিংবা প্রকাশ্য দিবালোকে আদালত চত্বরের মতো সুরক্ষিত স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনা—আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনা থেকে শুরু করে পূর্বশত্রুতার জেরে এমন খুনের ঘটনা এখন নিত্যদিনের খবরে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে তীব্র আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা গেলে এ ধরনের নৃশংসতা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।