বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে ‘লক্ষ্যবস্তু বানানো’ এবং তার বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন’ প্রচারণার অভিযোগ তুলেছেন ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী ও লেবার পার্টির সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক।
তার আইনজীবীরা বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগগুলোকে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তারা দাবি করেছেন, গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পেলেও টিউলিপকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি।
বিবিসি বলছে, দুদক টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত একটি চিঠির জবাব দিয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগের ‘দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছেন’ এবং শেখ হাসিনার শাসনামলের ব্যাপারে তার ‘অজ্ঞতার দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়’।
জানুয়ারিতে লেবার মন্ত্রিসভার ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারে স্বচ্ছতা আনতে কাজ করলেও, তিনি সরকারে থেকে কোনো বিতর্ক তৈরি করতে চাননি বলে জানান।
টিউলিপের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার তাকে ভবিষ্যতে ফিরে আসার সুযোগ রাখার ইঙ্গিত দেন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগ তদন্ত করছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা অবকাঠামো খাত থেকে প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন।
বিরোধী রাজনীতিবিদ ববি হাজ্জাজের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক তদন্ত শুরু করে। অভিযোগে বলা হয়, ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের মধ্যস্থতা করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক, যেখানে খরচ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল।
তবে টিউলিপের আইনজীবীরা চিঠিতে দাবি করেন, তিনি এ প্রকল্পের কোনো অংশে জড়িত ছিলেন না। যদিও ২০১৩ সালে রাশিয়ায় শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাকে একই ফ্রেমে দেখা গিয়েছিল, কিন্তু এটিকে তারা রাষ্ট্রীয় সফরের অংশ বলে উল্লেখ করেন।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ওঠে যে, ২০০৪ সালে তিনি লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় সাত লাখ পাউন্ড মূল্যের একটি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছেন, যা কোনো দুর্নীতির অংশ হতে পারে।
তবে টিউলিপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি পারমাণবিক প্রকল্প চুক্তির ১০ বছর আগের ঘটনা এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। তার আইনজীবীরা জানান, ফ্ল্যাটটি তাকে উপহার দিয়েছিলেন আব্দুল মোতালিফ নামে এক ব্যক্তি, যাকে তার পরিবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে জানান, টিউলিপ দীর্ঘদিন এই সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা সম্পর্কে জানতেন না। তবে মন্ত্রী হওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুদকের পক্ষ থেকে পাল্টা চিঠিতে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক ‘দুর্বৃত্তায়িত আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন বাড়িতে বড় হয়েছেন’, যা প্রমাণ করে তিনি এই দলের দুর্নীতি থেকে সুবিধা পেয়েছেন।
দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য টাইমস-কে বলেন, “মিজ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত অভিযোগ যুক্তরাজ্যের আদালতসহ যেকোনো আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব।”
টিউলিপের আইনজীবীরা বাংলাদেশ সরকার ও দুদকের গণমাধ্যম ব্রিফিংকে ‘যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অগ্রহণযোগ্য চেষ্টা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তারা দাবি করেছেন, ২৫ মার্চের মধ্যে দুদক যদি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে ধরে নেওয়া হবে।