পাকিস্তানের করাচি থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। এটি ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি জাহাজের বাংলাদেশে নোঙর করার ঘটনা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের দাবি, সরাসরি এই সামুদ্রিক সংযোগ তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সম্ভাব্য অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ বাংলাদেশের সীমানার খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে এই রাজ্যগুলো।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামুদ্রিক পথের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। যদিও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারেরও কম ছিল।
ভারতীয় একটি সূত্র দাবি করেছে, গত পাঁচ দশকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পাকিস্তানের কোনো উপস্থিতি ছিল না। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সিঙ্গাপুর ও কলম্বোর মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। এখন পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসার ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তারা আশঙ্কা করছে, নিষিদ্ধ পণ্য বা অস্ত্র পাকিস্তান থেকে আসতে পারে এবং সেগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছাতে পারে।
সূত্রটি আরও দাবি করে, ২০০৪ সালে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা একটি ট্রলারের মাধ্যমে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য ১,৫০০ চাইনিজ অস্ত্র পাঠিয়েছিল, যা উলফার হাতে যাওয়ার আগেই জব্দ করা হয়।
ভারত মনে করছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারা কৌশলগতভাবে চীনকে বাংলাদেশের বন্দর থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বিশেষত মংলা বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া তাদের একটি বড় জয় ছিল। কিন্তু এখন পাকিস্তানের সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পাওয়ায় এই অঞ্চলের ভূরাজনীতি নতুন করে প্রভাবিত হতে পারে।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো সরকারি বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। অন্যদিকে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট এটিকে একটি ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে এই উদ্যোগ।