টাঙ্গাইলের মধুপুরে হেফাজতে ইসলাম এবং কওমি ওলামা পরিষদের বাধার মুখে স্থগিত করা হয়েছে লালন স্মরণোৎসব। লালন সংঘ আয়োজিত এ কর্মসূচি বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে দুপুরের পর থেকে এলাকায় মাইকিং করে অনুষ্ঠান স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে আয়োজক সংগঠনটি।
অনুষ্ঠান উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. সবুজ মিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “হেফাজতে ইসলাম ও কওমি ওলামা পরিষদ মধুপুর শাখার বাধার কারণে আমাদের অনুষ্ঠানটি করা যাচ্ছে না।”
সবুজ মিয়া জানান, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে লালন সংঘ মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে দুইবার বৃহৎ পরিসরে লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করেছে। এ বছর ‘লালন স্মরণোৎসব ২০২৫’ নামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার।
তবে হঠাৎ খবর আসে, হেফাজতে ইসলাম মধুপুর শাখা অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আপত্তিকারী পক্ষের সঙ্গে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদউল্লাহ, কওমি ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা সোলায়মান কাসেমী, লালন সংঘের সভাপতি ফরহাদ হোসেন তরফদার, অনুষ্ঠান উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. সবুজ মিয়া। মধ্যস্থতার দায়িত্বে ছিলেন মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন সরকার।
ফরহাদ হোসেন তরফদার ও সবুজ মিয়া জানান, “ইসলামি দলগুলোর নেতারা আমাদের বলেছেন, লালনের মতাদর্শ নাজায়েজ, কুফরি ও শিরক। তাঁরা এই ‘ভ্রান্ত’ মতাদর্শ মধুপুরে প্রচার করতে দেবেন না। লালনের মতাদর্শ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা তা মানেননি। মধুপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় আমরা অনুষ্ঠান স্থগিত করেছি।”
হেফাজতে ইসলাম মধুপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদউল্লাহ বাধা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আমরা অনুষ্ঠান করতে মানা করেছি।”
কওমি ওলামা পরিষদ মধুপুর শাখার সভাপতি মাওলানা সোলায়মান কাসেমী-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল কবির ছুটিতে থাকায় সরাসরি অবগত ছিলেন না। তিনি বলেন, “বিকেলে অফিসে ফিরে শুনেছি, ইসলামি দলগুলো অনুষ্ঠান করতে বাধা দিয়েছে।”
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর্জা জুবায়ের হোসেন জানান, “দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান স্থগিত হয়েছে বলে শুনেছি। তবে কোনো পক্ষ বাধা দিয়েছে কি না, তা আমি নিশ্চিত নই।”