BMBF News

১০ম গ্রেড ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি দাবিতে স্মারকলিপি ও মানববন্ধন করেন বৈষম্য নিরসনে প্রাথমিক শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ

৯৭
রুমা আক্তার রিমি :

 

সহকারী শিক্ষক এন্টি পদ ধরে ১০ম গ্রেট ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি প্রদানের দাবিতে ৯ অক্টোবর বুধবার সকালে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর এক স্মারকলিপি প্রদান করেন বৈষম্য নিরেসনে প্রাথমিক শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ। স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।

স্মারকলিপিতে বৈষম্য নিরাসনে প্রাথমিক শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নানা রকম বৈষম্যের শিকার। বিগত সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে বৈষম্য নিরসনে শিক্ষকরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনো সুফল পাই নি।

আজ আমরা আপনার মত বিশ্বনন্দিত, স্বনামধন্য, সুপরিচিত, বিচক্ষণ, দূরদর্শী, সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী একজন ব্যক্তিত্বকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে পেয়ে আমরা বাঙালি জাতি ধন্য এবং কৃতজ্ঞ। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচারী সরকারের কবল থেকে এদেশ মুক্তি লাভ করেছে তাঁদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

বর্তমান উপদেষ্টা সরকারের দেশপ্রেম, সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতায় বাংলাদেশ সকল ধরনের সংকট কাটিয়ে উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলে আমরা বিশ্বাস ও আস্থা রাখি এবং আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার সকল বৈষম্য নিরসনের মধ্য দিয়ে শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এবং শিক্ষকরা হলেন জাতি গড়ার কারিগর। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়েন মেধাবী শিক্ষকদের পেশার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে যুগোপযোগী বেতন কাঠামো এখন সময়ের দাবি।

দীর্ঘ প্রায় ১০ (দশ) বছর পূর্বে ২০১৫ সালে সর্বশেষ জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখানেও প্রাথমিক শিক্ষকরা চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছে। দশ বছরে দ্রব্য মূল্য যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে প্রাথমিক শিক্ষকরা বাজার মূল্য বহন করতে দিশেহারা। বিগত পতিত স্বৈরাচারী সরকারের মেয়াদে বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস পেলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়রা বাজার মূল্য সালের পে-স্কেলে ২০ টি গ্রেডে বেতন নির্ধারিত হয়েছিল। যার ২০তম থেকে ১১ তম গ্রেড পর্যন্ত বেতনের গ্রেড ব্যবধান নির্ধারিত হয়েছিল সর্বোচ্চ ৮০০ (আট শত) টাকা।

১০ম থেকে ১ম গ্রেডের ব্যবধান রাখা হয়েছে সর্ব্বোচ্চ ১২০০০ (বারো হাজার) টাকা পর্যন্ত। যার ফলে ১৩তম গ্রেডে থাকা সহকারী শিক্ষকের জীবনমানের কোনো উন্নয়ন ঘটে নি।
২০০৯ সাল থেকে বন্ধ থাকা প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি আজও আলোর মুখ দেখে নি।

আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বৈষম্য নিরসনে সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেড, সহকারী প্রধান শিক্ষক ১১তম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদানের প্রস্তাব করেছেন। বৈষম্য নিরসনে প্রাথমিক শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সহকারী শিক্ষক এন্ট্রি পদ ধরে ১০ম গ্রেড ও শত ভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির জোর দাবি জানান।

দাবিসমূহ:

১. সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক/সমমান (নূন্যতম ২য় বিভাগ)। বেতন গ্রেড-১৩তম। যেখানে ৮ম শ্রেণি পাস ড্রাইভারের বেতন গ্রেড ১২তম। এটা শুধু শিক্ষকদের অবমাননা নয় জাতির জন্য লজ্জার।

২. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগযোগ্যতা স্নাতক/সমমান। বেতন গ্রেড ১০ম।

৩. পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগযোগ্যতা স্নাতক/সমমান। বেতন গ্রেড ১০ম।

৪. নার্সদের নিয়োগযোগ্যতা এইচ.এস.সি (ডিপ্লোমা-ইন- নার্সিং)। বেতন গ্রেড ১০ম।

৫. উপসহকারী কৃষি অফিসারদের নিয়োগযোগ্যতা এস.এস.সি (কৃষি ডিপ্লোমা)। বেতন গ্রেড ১০ম।

৬. ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের নিয়োগযোগ্যতা স্নাতক/সমমান। বেতন গ্রেড ১০ম।

৭. বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, মাঠ প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগযোগ্যতা স্নাতক/সমমান। বেতন গ্রেড ৯ম ও ১০ম।

৮. বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার নিয়োগযোগ্যতা স্নাতক/সমমান। বেতন গ্রেড ১০ম।

৯. এছাড়া একই কারিকুলামে, একই সিলেবাস, একই স্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগযোগ্যতা স্নাতক/সমমান সাথে বিএডধারী। বেতন গ্রেড ১০ম।

 

সহকারী শিক্ষকরা দৈনন্দিন পাঠদানের বাইরেও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বিত কাজের অংশীদার। যেমন: ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোট গ্রহণ, আদমশুমারী, শিশু জরিপ, ভূমি জরিপ, উপবৃত্তি, কৃমিনাশক ঔষধ ইত্যাদি।

পে-স্কেলে গ্রেড ব্যবধানে টাকার বৈষম্য, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, একই যোগ্যতা সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের বেতন গ্রেডের বৈষম্যের যাতাকলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা বিপন্ন। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে এবং শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যৌক্তিক এবং যুগোপযোগী প্রস্তাবিত দাবি মেনে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।