রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন শপিংমল ও আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘অক্সিলারি ফোর্স’ নামে একটি নতুন বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সোমবার ডিএমপির এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এবং রমজান ও ঈদ উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অক্সিলারি ফোর্স কী?
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, ‘মেট্রোপলিটন পুলিশের আইন অনুযায়ী অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনারের রয়েছে। সে অনুযায়ী, বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।’
এই ফোর্সের সদস্যদের হাতে একটি ব্যান্ড থাকবে, যেখানে লেখা থাকবে ‘সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা’। তারা পুলিশের মতো কিছু দায়িত্ব পালন করতে পারবে, তবে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা থাকবে না।
ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘মেট্রোপলিটন পুলিশের অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬ অনুযায়ী, ডিএমপি কমিশনার চাইলে কাউকে সহযোগী পুলিশ হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন।’
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘অক্সিলারি ফোর্স পুরোপুরি পুলিশ বাহিনী নয়, তবে এটি আধা-সরকারি একটি বাহিনী। পুলিশের কাজকে সহায়তা করতেই এটি গঠন করা হচ্ছে।’
অক্সিলারি ফোর্স কী কী করতে পারবে?
ডিএমপি জানিয়েছে, এই বাহিনী পুলিশের সহায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, টহল দেওয়া ও অপরাধীদের আটক করার ক্ষমতা থাকবে। তবে তারা কোনো ধরনের তদন্ত বা আনুষ্ঠানিক মামলা পরিচালনা করতে পারবে না।
তবে এই ফোর্সের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা পুলিশের মতো হবে না। তাদের কোনো অস্ত্র সরবরাহ করা হবে কি না, সে বিষয়েও ডিএমপি নিশ্চিত করেনি।
ডিএমপি মিডিয়া শাখার ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছি, যাতে তারা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাদের হাতে একটি আর্মড ব্যান্ড থাকবে, যা তাদের কর্তৃত্ব নির্দেশ করবে।’
তবে কতজন অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগ দেওয়া হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
কেন অক্সিলারি ফোর্স গঠন করা হচ্ছে?
ডিএমপি কমিশনার জানান, রমজান ও ঈদের সময় ঢাকা শহরের মার্কেট ও শপিংমলগুলো গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এসময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি জনবল প্রয়োজন হয়।
তিনি বলেন, ‘পুলিশের সদস্যদের অনেকে ছুটিতে যাবেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে কাজে লাগানো হবে।’
অক্সিলারি ফোর্সের কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ডিএমপি কমিশনার আশ্বস্ত করেছেন, ‘এই ফোর্সের সদস্যদের যথাযথ যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘যদি সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়া নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে এর অপব্যবহার হতে পারে। তাই দক্ষ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের বাছাই করা জরুরি।’
যদি কোনো অক্সিলারি ফোর্স সদস্য দায়িত্ব পালনে অন্যায় করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বড় অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে, আর ছোটখাটো অপরাধ করলে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
পুলিশের বাইরে নতুন ফোর্সের প্রয়োজনীয়তা
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমাদের আইন অনুযায়ী, বিশেষ পরিস্থিতিতে সহযোগী ফোর্স নিয়োগ দেওয়া যায়। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। তাই সবাইকে অনুরোধ করব—যখন আপনারা বাড়ি ছাড়বেন, তখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’