BMBF News

আবরার ফাহাদ হত্যায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ আসামির যাবজ্জীবন বহাল

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

রোববার (১৬ মার্চ) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। আদালত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ও আপিল খারিজ করে দেন। রায় ঘোষণার সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা, আসামিদের পরিবারের সদস্যরা এবং আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ ও বাবা বরকত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আবরার ফাইয়াজ বলেন, “রায় বহাল রয়েছে, আমরা সন্তুষ্ট। আশা করব দ্রুত প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করা হবে।” বরকত উল্লাহ বলেন, “নিম্ন আদালতের রায় বহাল রয়েছে, এটি যেন দ্রুত কার্যকর হয়। আমরা আপাতত সন্তুষ্ট এবং সরকারের কাছে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানাই।”

একজন আসামির কারাগার থেকে পলাতকের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি আমরা ছয় মাস পরে জানতে পারলাম। এটি আমাদের কাছে প্রশ্ন নয়, বরং কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন করা উচিত।”

এর আগে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী, রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ। আসামিপক্ষে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী ও মোহাম্মদ শিশির মনির।

২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছায়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দিলে তা অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়। পরে কারাবন্দি আসামিরা জেল আপিল করেন এবং অনেকে ফৌজদারি আপিলও করেন।

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার অপু, মেহেদী হাসান রবিন শান্ত, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম তানভির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমী, মো. মিজানুর রহমান মিজান, এস এম মাহমুদ সেতু, সামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল জিসান ও মুজতবা রাফিদ।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন অমিত সাহা, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, মো. আকাশ হোসেন, মুহতাসিম ফুয়াদ ও মো. মোয়াজ আবু হোরায়রা।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এক নেতার কক্ষে নিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনের তদন্ত শেষে একই বছরের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান চার্জশিট দাখিল করেন।