BMBF News

গাজা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছানো এক ব্যক্তির দুঃসহ যাত্রা

ইসরায়েলের সহায়তায় গাজা ছাড়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে পৌঁছানো ১৫৩ জন ফিলিস্তিনির একজন লোয়াই আবু সাইফ বলেছেন, তারা যখন ইসরায়েল ত্যাগ করেন, তখন জানতেনই না শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছাবেন।

গত শুক্রবার আল জাজিরাকে তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপ আর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে পরিবারের সঙ্গে বেরিয়ে আসার সে পথ ছিল ‘দুঃসহ এক যাত্রা’।

আবু সাইফ তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বৃহস্পতিবার জোহানেসবার্গের ওআর ট্যাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করা একটি চার্টার্ড বিমানের যাত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা কখনোই ভাবিনি যে কোনো দল… এই ধরনের উদ্ধারযাত্রা সম্ভব করতে পারবে।”

জোহানেসবার্গে নামার পর তিনি বলেন, “আমি বলতে পারি, এখন নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে… যা ফিলিস্তিনিদের বিশেষ করে গাজার মানুষের জন্য খুব অর্থবহ।”

একটি অলাভজনক সংগঠন পরিচালিত বিতর্কিত ‘ট্রানজিট স্কিম’-এর বিষয়ে ধীরে ধীরে তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। সংগঠনটির কর্মীরা অভিযোগ করছেন, ইসরায়েল বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনে সহায়তা করে গাজা থেকে তাদের বাস্তুচ্যুতিকে উৎসাহিত করছে।

আবু সাইফের বিবরণ অনুযায়ী, ওই সংগঠিত দলের যাত্রাপথে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সহযোগিতা করেছে বলেই মনে হয়।

তাদের বহনকারী ফ্লাইটটি ইসরায়েলের রামন বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে কেনিয়ার নাইরোবি হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে জোহানেসবার্গে পৌঁছায়। কিন্তু ইসরায়েলের দেওয়া কোনো ‘ডিপার্চার স্ট্যাম্প’ না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাদের নামতে দেয়নি।

পুরো পথ পাড়ি দিতে লেগেছে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়, আর মাঝপথে বিমানও বদলাতে হয়েছে।

আবু সাইফ বলেন, গাজা ছাড়ার মুহূর্তে তারা জানতেনই না কোথায় নেওয়া হচ্ছে। নাইরোবিতে কানেক্টিং ফ্লাইটে চড়ার আগে তারা জানতে পারেন যে, গন্তব্য জোহানেসবার্গ।

শুক্রবার আম্মান থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক নূর ওদেহ বলেন, ইসরায়েল এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ‘ইসরায়েলি সমন্বয় ছাড়া’ এই যাত্রা হওয়া অত্যন্ত অসম্ভব।

তিনি বলেন, “ওই কল্পিত হলুদ রেখার (গাজায়) কাছে কেউই যেতে পারে না, গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মানুষগুলোকে বাসে করে সেই হলুদ রেখা পেরিয়ে, গাজার যে ৫৩ শতাংশ এখনো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, তা অতিক্রম করে ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে রামন বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে।”

অস্পষ্টতা আর অনিশ্চয়তা
আবু সাইফ জানান, তার স্ত্রী ‘আল-মাজদ ইউরোপ’ নামের জার্মানভিত্তিক একটি এনজিওর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, যার ওয়েবসাইট অনুযায়ী জেরুজালেমে একটি অফিস রয়েছে।

এই এনজিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিবন্ধন ফর্ম প্রচার করেছিল। কীভাবে নির্বাচন করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনে হয় যেসব পরিবারের শিশু রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং বৈধ ফিলিস্তিনি ভ্রমণপত্র ও ইসরায়েলের ‘সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স’ থাকা দরকার ছিল। নির্বাচনের মানদণ্ড সম্পর্কে আমি এটুকুই জানি।

তারা কবে গাজা ছাড়তে পারবেন, আগেভাগে কোনো সময়সূচি জানানো হয়েছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না। তারা শুধু বলেছিল একদিন আগে জানিয়ে দেওয়া হবে। তাই-ই হয়েছে।”

প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যক্তিগত ব্যাগ বা লাগেজ না নিতে বলে, শুধু প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিতে বলা হয়েছিল।

খরচের বিষয়ে আবু সাইফ জানান, প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ১,৪০০ থেকে ২,০০০ ডলার পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে; শিশু বা কোলে নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রেও একই পরিমাণ।

নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের রাফাহ থেকে বাসে করে ইসরায়েল সীমান্তের কেরেম শালোম (আরবিতে কেরেম আবু সালেম) ক্রসিংয়ে আনা হয়, যেখানে নিরাপত্তা যাচাই শেষে রামন বিমানবন্দরের দিকে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, তাদের ভ্রমণপত্রে ইসরায়েল কোনো স্ট্যাম্প দেয়নি। গাজায় কোনো ফিলিস্তিনি বর্ডার অফিসার না থাকায়, তিনি ভেবেছিলেন এটি রুটিন প্রক্রিয়া।

দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে যখন কর্তৃপক্ষ জানতে চাইছিল, আপনারা কোথা থেকে এসেছেন—তখনই বুঝলাম সমস্যাটা কোথায়, বলেন আবু সাইফ।

এনজিওটি বলেছে, তারা এক–দুই সপ্তাহ সহায়তা করতে পারবে, এরপর নিজেদের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে আবু সাইফ জানিয়েছেন, অনেকেই আগেই নিজের পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন।

তিনি বলেন, “অনেকের কাছে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া—এসব দেশের জন্য কাগজপত্র আছে। মোট যাত্রীদের প্রায় ৩০ শতাংশ একই দিন বা দু’দিনের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়েও গেছে। কেউ কেউ থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসা বা অন্যান্য কারণে।

দক্ষিণ আফ্রিকা জানিয়েছে, ১৫৩ জনের মধ্যে ১৩০ জন দেশে প্রবেশ করেছেন, আর ২৩ জন অন্য গন্তব্যে চলে গেছেন।

আবু সাইফ বলেন, “যে কোনো দেশে জীবনযাপনের খরচ গাজার চেয়ে অনেক কম হবে, মানুষ এটা হিসেব করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

সূত্র: আল জাজিরা