জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের “প্রধান শিক্ষক” পদে গেজেট বাস্তবায়নের দাবি
রুমা আক্তার রিমি :
জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রধান শিক্ষকদের “প্রধান শিক্ষক” পদে গেজেট বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ই অক্টোবর শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন বাংলাদেশ জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় গেজেট থেকে বাদপরা প্রধান শিক্ষক শিক্ষক ঐক্য জোট।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির আহবায়ক খ.ম হুমায়ন কবীর এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব খায়রুল ইসলাম। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন হাফিজুর রহমান খাঁন, মোঃ গোলাম মোস্তফা, মোঃ এমদাদ হোসেন, আতিকুর রহমান খোকন, মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মিনারুজ্জামান মিন্টু, প্রতাপ চন্দ্র দাস, আঃ মালিক মামুন, মোঃ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, মোঃ মনির হোসেন, মোঃ আশরাফুল কবির হোছাইনী, মোঃ আবু হানিফা, মোঃ রইচ উদ্দিন, কামরুজ্জামান আজিম, মোঃ হারুন শাহ্, মোঃ হেমায়েত হোসেন, শহিদুল ইসলাম, জিয়া উদ্দিন বাদল, নাজিফা সুলতানা, আলাউদ্দিন মানিক, আক্তার হোসেন, গোলাম রব্বানী, মোস্তফা উদ্দিন, এমরান হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,
বিগত সরকার প্রধান ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারী ঐতিহাসিক শিক্ষক সমাবেশের মাধ্যমে দেশের ২৬,১৯৩টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত ১,০৮,৭৭২ জন শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণ করেন। জাতীয়করণকৃত প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের জন্য ১ জন প্রধান শিক্ষক ও ৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টির ঘোষনা দেওয়া হয়। সেই ঘোষনা অনুসারে ২৬,১৯৩ টি বিদ্যালয়ের জন্য ২৬,১৯৩ টি প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ১ম ধাপের-২২,৯৮১ জন শিক্ষকদের মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রধান শিক্ষক-কে গেজেটে অর্ন্তভুক্ত করা হয় কিন্তু ১ম ধাপের বাকী শিক্ষকসহ ২য় ধাপের-২২৫২টি এবং ৩য় ধাপের-৯৬০টি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও “প্রধান শিক্ষক” পদে অদৃশ্য ইশারার কারনে শিক্ষক গেজেট থেকে “প্রধান শিক্ষক” পদটি স্থগিত রেখে সহকারী শিক্ষক হিসাবে গেজেট প্রকাশ করেন তাই বাদপড়া প্রধান শিক্ষকগণ বৈষম্যর শিকার হন।
মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারিকৃত বাংলাদেশ গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত ১২-০৮-২০১৩ তারিখের ৩৮.০০৭.০১৫.০০০.০৩.০০.২০১৩-৩০০ স্মারক নম্বর উল্লেখ আছে যে, ৪.২ অনুচ্ছেদের “(ঘ) জাতীয়করণকৃত প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের জন্য ১ জন প্রধান শিক্ষক ও ৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হইবে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের এইভাবে সৃজিত পদের বিপরীতে আত্তীকরণের পর অবশিষ্ট পদ নতুন নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হইবে।” অর্থাৎ জাতীয়করণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক যে যে পদে কর্মরত ছিলেন, সেই শিক্ষককে সেই পদেই আত্তীকরণের পর অবশিষ্ট সৃষ্ট শূন্যপদ নতুন নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করিতে হইবে।”
প্রথম ধাপ অবশিষ্ট কমিউনিটি বিদ্যালয়, প্রথম ধাপ অবশিষ্ট রেজিষ্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২য় ধাপের- ১৭১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩য় ধাপের- ৯৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক গেজেটের প্রাক্কালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান শিক্ষক পদ চেয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিসে প্রধান শিক্ষক তথ্য চেয়ে তথ্য প্রেরণ করেন যাহার স্মারক নং-৩৮.০৭.০১৫.০০০.১৬০০.২০১৩/১১৪৩ তারিখ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ তার ফলশ্রুতিতে জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের কর্মরত প্রধান শিক্ষকের নাম উল্লেখ পূর্বক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদ্যালয়-১ শাখায় প্রেরণ করেন। কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় সেই প্রধান শিক্ষকের পদ মনগড়াভাবে বাতিল করে সহকারি শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ৪
জনের নাম সহকারি শিক্ষক কর্মরত হিসেবে প্রেরণ করায় আমাদেরকে সহকারি শিক্ষক হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে।
কিন্তু বিগত সরকার প্রধান ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারিকৃত গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও নীতিমালা এবং পরিপত্র থাকা সত্ত্বেও উক্ত বিদ্যালয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মরত
“প্রধান শিক্ষক” যারা ছিলেন তাদেরকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ-কে উপেক্ষা করে সহকারী শিক্ষক হিসাবে গেজেট প্রকাশ করেন এবং কর্মরত প্রধান শিক্ষকগণ বৈষম্যর শিকার হন।
আমরা জাতীয়করণের পূর্বে তৎকালীন সময় সময় জারিকৃত গেজেট ও পরিপত্রের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এসএমসি কর্তৃক প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে মেধা, শ্রম ও দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করিতেছি। উক্ত বিষয়টি অদৃশ্য ইশারার কারনে প্রধান শিক্ষক পদে গেজেট করা সম্ভব হয়নি। তাই প্রধান শিক্ষকগণ বৈষম্য শিকার হয় এবং প্রধান শিক্ষক পদে গেজেট ভূক্ত না হওয়ায় সংক্ষুব্ধ প্রধান শিক্ষকগণ আদালতে দ্বারস্থ হয় এবং মাননীয় আদালত ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষকদের পক্ষে মামলার রায় প্রদান করেন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারিকৃত গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও নীতিমালা এবং পরিপত্রের আলোকে “প্রধান শিক্ষক” পদে গেজেট পাওয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৫ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের বেসামরিক কোনো পদে কর্মরত কোনো ব্যক্তিকে কেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে না এ মর্মে কারণ দর্শানোর যথাযথ সুযোগ না দিয়ে চাকুরিচ্যুত বা অপসারণ করা বা তার পদাবনতি ঘটানো যাবে না।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ্য যে, অধিকাংশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪ জন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে পরিচালিত হতো বিধায় উল্লিখিত প্রজ্ঞাপনে প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জন শিক্ষকের পদের উল্লেখ করা হয়। জাতীয়করণকৃত এসকল বিদ্যালয়ে শিক্ষক আত্মীকরণের পর এসব বিদ্যালয়ের সেট আপ অন্যান্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুরুপ হবে এটিই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। উল্লেখ্য, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১ জন প্রধান শিক্ষক এবং ৪ জন সহকারী শিক্ষকসহ মোট ৫ জন শিক্ষক পদ সৃজন করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয়করনকৃত বিদ্যালয় সমুহের পদ সৃজনের ক্ষেত্রে যাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রমিত সেট আপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পদ সৃজন করতে পারে সে-লক্ষে ২০ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখের প্রজ্ঞাপনের ৪.২ অনুচ্ছেদের (ঘ) দফা সংশোধন করা হয়।
এমতাবস্থায় বছরের পর বছর পদ বঞ্চিত শিক্ষকরা যেমন প্রাপ্য বেতন স্কেল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ঠিক একইভাবে সামাজিক মর্যাদাও ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং বিদ্যালয় পরিচালনায় নানা প্রতিবন্ধিকতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে তাই জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য জারিকৃত শিক্ষক গেজেট, প্রজ্ঞাপন ও নীতিমালা এবং পরিপত্র থাকা সত্তেও “প্রধান শিক্ষক” হিসেবে “প্রধান শিক্ষক” পদে গেজেটে অর্ন্তভুক্তিকরণ আমাদের সাংবিধানিক অধিকার তাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে “প্রধান শিক্ষক” হিসেবে গেজেট করার জোড় দাবী জানান।