পটুয়াখালী প্রতিনিধি :
পটুয়াখালীর দুমকিতে এক আওয়ামীলীগ নেতা ক্ষমতার দাপটে প্রশাসনের জব্দকৃত দেড়কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ পন্টুন, ভেকু মেশিন ও একটি ট্রলার অন্যের নামে স্পট নিলামে মাত্র ১০লাখ টাকায় বিক্রি দেখিয়ে সাড়ে আঠাশ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ত্রাণ আত্মসাৎ, এমপি বরাদ্দের সরকারি টিউবওয়েল বিক্রি, রেকর্ডীয় খাল দখল করে আলীশান ভবন নির্মাণ, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সরকারি নানা বরাদ্দ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। প্রভাবশালী ওই নেতার নাম আবুল কালাম আজাদ। তিনি ৯৩সালে তৎকালিন সাংসদ ও মন্ত্রী এম. কেরামত আলীর গলায় মালা দিয়ে প্রকাশ্য জনসভায় বিএনপিতে যোগ দেন। প্রায় ৩বছর পরে ৯৬‘র জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে পরিস্থিতি বুঝে তিনি আ‘লীগে এসে নানা কৌশলে সভাপতির পদ দখল করে ক্ষমতার দাপটে লুটপাটে লিপ্ত রয়েছেন। তার ক্ষমতার অপব্যবহার, দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, অবৈধ দখলদাড়িত্বে আ‘লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও কর্মী বিচ্ছিন্ন হতে বসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৬মার্চ উপজেলার পশ্চিম আঙ্গারিয়ার ভাঙ্গারমাথা এলাকায় পায়রা নদীতে অবৈধ মাটি কাটার দায়ে একটি ভেকু, মেশিন, ভাইভাই নামের একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার, ৯০ফুট দীর্ঘ ও ৩৩ফুট প্রস্থের একটি বার্জ জব্দ করে কোস্টগার্ড। খবর পেয়ে উপজেলা আ‘লীগ সভাপতি আবুল কালাম মৃধা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো. আল ইমরানকে জব্দকৃত মালামাল নামমাত্র মূল্যে (১০ লাখ টাকা) স্পট নিলামে বাধ্য করেন। স্পট নিলামে তিনি অনুপস্থিত থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবে উপস্থিত দরদাতাদের ম্যানেজ করে তার একান্ত অনুসারি রিপন মোল্লার নামে নিলাম নেন। অভিযোগ রয়েছে, অন্যের নামে নিলাম হওয়া দেড় কোটি টাকারও অধিক মূল্যমানে মালামাল হস্তান্তরের সাথে সাথেই প্রকৃত মালিক নোয়াখালীর কবির হাটের জনৈক শহীদুল্লাহ এর কাছ থেকে ২১মার্চ ট্রাস্ট ব্যাংক ট্রানজেকশনে আবুল কালাম আজাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ মেসার্স আজাদ এন্টার প্রাইজের নামে অগ্রণী ব্যাংক দুমকি শাখার সঞ্চয়ী ০১৩———–৩৬৭ নং একাউন্টে ২০লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। যা বিডারদের মাঝে ভাগবন্টন না করেই তিনি একাই আত্মসাৎ করেছেন। অপর দিকে শুধুমাত্র ভেকু ও ট্রলারের বিপরীতে নগদ সাড়ে ৮লাখ টাকা নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মোট সাড়ে আঠাশ লাখ টাকা হজম করে ফেলেছেন। অবশ্য বিধি বহির্ভূত স্পট নিলামের বিষয়টি প্রকাশ পেলে এর খেসারত হিসেবে অত্যন্ত সৎ নির্বাহি কর্মকর্তা মো. আল ইমরানকে সম্প্রতি প্রশাসন ক্যাডার থেকে বদলি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দ ও স্থানীয় সাংসদ দ্বয়ের বাৎসরিক বরাদ্দের টিআর, জিআর, কাবিখা, কাবিটা, সরকারি টিউবওয়েল নিজের ইচ্ছামতে ভাগ-বন্টন ও বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। চাকুরির দালালী, ট্রান্সফার বাণিজ্য, টেন্ডারবাজীতে তার জুরি মেলা ভার। পিরতলা বাজার সংলগ্ন রেকর্ডিও সরকারি খাল দখল করে গড়ে তুলেছেন ৪তলা বিশিষ্ট আলীশান ‘পিরতলা ভবন‘। রয়েছে ‘মেসার্স আজাদ এন্টারপ্রাইজ নামে তার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলা শহরে আজাদ স্টোর্স নামের বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এসকল প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায় অবৈধ বিজনেসে বিশাল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তিনি। তার বিএনপি-জামায়াত প্রীতির কারণে নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। সম্প্রতি এক ছেলেকে পবিপ্রবিতে শিক্ষক পদে চাকুরি দেয়ার শর্তে ৩০লাখ টাকা নিয়ে তার বাবা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু হানিফ খানকে আ‘লীগে যোগদান করান। অবশ্য দলীয় নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে ২৪ঘন্টার ব্যবধানে ওই বিএনপি নেতার যোগদান বাতিল করতে বাধ্য হন। তার এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা আ‘লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও মুরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান সিকদার বলেন, ক্ষমতার দাপটে তিনি (কালাম মৃধা) যাচ্ছে তাই করছেন। কোন রাজনৈতিক সংগঠনে একক সিদ্ধান্তে উন্নয়ন বরাদ্দের ভাগবন্টন করার নজির নেই। কিন্ত তিনি কাউকে কিছুই জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেন না, আমরা কিছুই জানিনা। উপজেলা আ‘লীগ নেতা ও শ্রীরামপুর ইউপি সদস্য মো: হুমায়ুন কবির মৃধা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি একাই এমপি বরাদ্দ, টিউবওয়েল, কম্বল, টিআর, জিআরসহ সকল বরাদ্দ ভোগ করছেন। দলীয় নেতা কর্মীদের না দিয়ে বরং বিএনপি জামায়াত পন্থিদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে প্রদান করছেন। এভাবে তৃণমূলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদেরকে দলীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। একই অভিযোগ করেন, উপজেলা আ‘লীগের সহসভাপতি মজিবুর রহমান মাষ্টার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আনিসুর রহমান মিন্টু, দপ্তর সম্পাদক অধ্যাপক মাইনুল ইসলাম, মো: রেজাউল হক রাজন, সহদপ্তর সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসেন, সদস্য মনিরুজ্জামান, উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি খন্দকার মোশারফ হোসেন প্রমূখ। তাদের মতে সভাপতি কালাম মৃধার ক্ষমতার অপব্যবহার, বরাদ্দ লুটপাটের কারণে ইতোমধ্যে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, যার প্রভাব আগামি নির্বাচনেও পড়বে বলে আশংকা আছে।
উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, আভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের কারণে ইর্ষান্বিত হয়ে একটি চক্র তার বিরুদ্ধে এসব বানোয়াট অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে, ৯৩সালে বিএনপিতে যোগদেয়া এবং বিএনপি নেতা হানিফ খানকে আ‘লীগে যোগদান প্রশ্নের কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি। খাল দখলে ভবন নির্মাণ প্রশ্নের জবাবে বলেন, খাল দখলের অভিযোগ মোটেই সঠিক নয়, তার পৈত্রিক রেকর্ডিও সম্পত্তিতে ভবন নির্মাণ করেছেন।