বিশেষ প্রতিনিধিঃ
জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা অবমাননাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর জেলা দুমকী উপজেলার পাংগাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রমের শুরুতে জাতীয় সংগীত,জাতীয় পতকা উত্তোলনের মাধ্যমে এসেম্বলী শুরু হলেও পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাংগাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ এসেম্বলীতে উপস্থিত না হয়ে জাতীয় সংগীত ,জাতীয় পতাকাকে অবজ্ঞা করে লাইব্রেরীতে বসে থাকেন বীরদর্পে। এমন গুরুতর অভিযোগ সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির ১০টি অভিযোগ সম্বলিত একটি অবেদন পত্রে প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবী করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোঃ সোহরাব হোসেন। শিক্ষক মোঃ সোহরাব হোসেন এর সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে ঐ অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক। এছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে এসএসসি পরীক্ষার হলে নকল সরবরাহ করতে গিয়ে বহিস্কার হয়ে মামলায় জর্জরিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে ।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলির মধ্যে বিদ্যালয়ের শুরুতে এসেম্বলীতে অনুপস্থিত থেকে জাতীয় পতাকা ,জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করে লাইব্রেরীতে নিজ চেয়ারে বসে থাকা,টাকার বিনিময়ে ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক শাহাদাত হোসেনকে অননুমোদিত ভাবে দিনের পর দিন ছুটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা। ওই শিক্ষকের অনুপস্থিত কালীন হাজিরা খাতায় পরবর্তীতে ইচ্ছে মত টাকার বিনিময়ে স্বাক্ষর প্রদান করানো, নতুন শিক্ষক যোগদানকালে মোটা অংকের টাকা দাবী, শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ইত্যাদি ।
জানা যায়, বিগত ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টম্বর এসএসসি পরীক্ষার হলে কেন্দ্র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্বপালন কালে বাংলা পরীক্ষার এমসিকিউ এর পরীক্ষার ও এমআরশীট ভরাট করে দেয়ার অপরাধে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত ফৌজদারী মামলা হয়।পুলিশ তাকে খুজতে বিদ্যালয়ে আসলেও তিনি গা ঢাকা দেন।মামলার কারনে তিনি বিদ্যালয়ে প্রায় ২ মাস অনুপস্থিত থাকেন পরবর্তীতে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে পটুয়াখালীতে হাজির হলেও অনুপস্থিত কালীন সময়ে নিজের মন মতো হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। এছাড়াএ ঐ মামলার চার্জ শুনানীর দিন গত (৫ অক্টোবর) আদালতে স্বশরীরে হাজির থেকেও বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন যা সম্পূর্ন বেআইনী । এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্নদের কাছ থেকে মার্কশীট,সার্টিফিকেট প্রদানকালে জোড় করে অতিরিক্ত টাকা নেয়া। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে মনোনয়ন পত্র বিক্রির পর তিনবার নির্বাচন বাতিল হওয়ায়, তিনবারের ফরম বিক্রির প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা। এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে টাকা উঠিয়ে তার খরচের হিসাব চুড়ান্ত না করা সহ বিদ্যালয়ের কোন আয়-ব্যায়ের হিসাব না থাকা। শিক্ষকদের সাথে বিভিন্ন সময় অসৌজন্যমূলক আচরন ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করা। জনৈক শিক্ষকের ছুটির আবেদনপত্র ছিড়ে ফেলা সহ অসৌজন্যমূলক আচরন করার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক ওই প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবী জানিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন।
শিক্ষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ নভেম্বর তদন্তে আসেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মজিবুর রহমান। এছাড়াও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে দুমকী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চলতি বছরের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে অভিযোগ দায়ের করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তিনি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষক মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন , প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন,ভুলবোঝাবুঝির জন্য এ রকম ঘটনা ঘটেছে। আমি অভিযোগের বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত জবাব দিয়েছি, আশা করি অতিদ্রুত এ বিষয়ের সমাধান হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তের কাজ প্রায় ৭০% শেষ হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে কোন মন্তব্য করতে চাই না। তবে অভিযোগের সকল বিষয় তদন্ত করা হবে।