BMBF News

নাগপুরে হিন্দু-মুসলমান সহিংসতা: এখনও চলছে কারফিউ, আটক ৬৫

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দু’দিন পার হলেও এখনও কারফিউ জারি রয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৬৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সংবাদ সংস্থা এএনআই ও পিটিআই জানিয়েছে, নাগপুরের দশটি থানার আওতাধীন এলাকায় কারফিউ বলবৎ রয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধি, অস্ত্র আইন ও জন-সম্পত্তি ক্ষতিসাধন প্রতিরোধ আইন-এর বিভিন্ন ধারায় একটি এফআইআর দায়ের করেছে।

এফআইআরে ৫১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন নাবালক রয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে জাফর নগর, তাজবাগ, মোমিনপুরা ও ভালাদাপুরা এলাকার বাসিন্দারা রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ফাহিম খান-এর একটি উসকানিমূলক ভাষণের ভিডিও পুলিশের হাতে এসেছে, যা সহিংসতার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। ওই ভিডিওর ভিত্তিতে তাকে বুধবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এএনআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের ওপর পাথর ও পেট্রল বোমা নিক্ষেপের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ বারবার সতর্ক করলেও সহিংসতা চলতে থাকে, যা নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়।

এছাড়া, নারী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিবিসি সংবাদদাতা ভাগ্যশ্রী রাউত নাগপুরের সহিংসতা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি আপাতত শান্ত থাকলেও দোকানপাট বন্ধ এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

সহিংসতার চিহ্ন এখনও স্পষ্ট—ভাঙা জানালা, রাস্তার পাশে পাথর ও ইটের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে। কিছু জায়গায় জ্বালিয়ে দেওয়া গাড়ির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।

শহরের সাধারণ মানুষ এমন ঘটনার জন্য বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এক মুসলিম দোকানদার আব্দুল খালেক বলেন, “আমার জীবনে কখনও এমন ঘটনা দেখিনি। আমাদের শহরে এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। সহিংসতার পর থেকে দোকান বন্ধ রয়েছে।”

একজন আইনজীবী রাকেশ দাভরিয়া বলেন, “আমরা তো সবাই একসঙ্গে বসবাস করি, ব্যবসা করি। তাহলে কেন এই হিংসা? আমাদের বাচ্চারা একসঙ্গে পড়াশোনা করে, তাহলে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে লাভ কী?”

শহরবাসী কুণ্ডা যাদব বলেন, “সহিংসতার সময় বাড়িতে শুধু নারীরাই ছিলাম। আমাদের বাড়িতে পাথর ও কাঁচের বোতল নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা চরম আতঙ্কে ছিলাম।”

পুলিশ ও প্রশাসন জানিয়েছে, শহরের শান্তি ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কারফিউ এখনও বলবৎ রয়েছে এবং সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।