BMBF News

ফসলের ক্ষেতে পতঙ্গের জবাব এআই?

প্রতিবছর সারাবিশ্বে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ৪০ শতাংশ নষ্ট নয় কীটপঙ্গের উপদ্রবে; জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসেব অনুযায়ী যার অর্থমূল্য ২২ হাজার কোটি ডলার।

এ পরিস্থিতি মোকাবেলার সম্ভাব্য উপায় হিসেবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছে ‘ট্র্যাপভিউ’ নামের এক কোম্পানি।

সিএনএন জানিয়েছে, ফসলের কীটপতঙ্গ ধরতে বিশেষ ধরনের এক ফাঁদ বানিয়েছে স্লোভেনিয়ার কোম্পানিটি। কীটপতঙ্গগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে ট্র্যাপভিউয়ের ওই ফাঁদ।

তবে, সম্ভবত ফাঁদের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এর সতর্কবার্তা প্রচারের সক্ষমতা। ফাঁদে ধরা পড়া কীটপতঙ্গকে চিহ্নিত করে ফসলি জমিতে সম্ভাব্য সংক্রমণ সম্পর্কে কৃষককে সতর্ক করে দিতে পারে ট্র্যাপভিউয়ের এআই প্রযুক্তি।

কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্র্যাপভিউ এবং এর মূল কোম্পানি ইএফওএসের প্রধান নির্বাহী মাটেস স্টেফানচেক সিএনএনকে বলেন, “পোকামাকড়ের ছবি সমৃদ্ধ পৃথিবীর বৃহত্তম ডেটাবেইজ বানিয়েছি আমরা, যা আমাদের আধুনিক এআই নির্ভর প্রযুক্তির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের সুযোগ দেয়।”

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কিছু প্রজাতির পোকামাকড়; একই কারণে পরিযায়ী ও ফসলের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের জীবনচক্রেও এসেছে বড় পরিবর্তন।

এ পরিস্থিতিতে কৃষকদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সহযোগিতা করতে চান স্টেফানচেক।

সঠিক স্থানে সঠিক সময়ে হস্তক্ষেপ

ফেরোমন ব্যবহার করে কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করে ট্র্যাপভিউয়ের ফাঁদ। এরপর ফাঁদের ভেতরে থাকা একটি ক্যামেরা ছবি তুলে নেয় বন্দি কীটের। ট্র্যাপভিউয়ের ডেটাবেইজের সঙ্গে ফাঁদে তোলা ছবি মিলিয়ে দেখে এআই। ৬০টির বেশি প্রজাতির কীটপতঙ্গ চিহ্নিত করতে পারে এ প্রযুক্তি।

আপেল, টমেটো এবং লেটুসসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্যের জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ চিহ্নিত করে তার সঙ্গে লোকেশন ডেটা এবং আবহাওয়ার ডেটা সমন্বয় করে কীটপতঙ্গগুলো এরপর কোথায় ছড়াতে পারে তা নির্ধারণের চেষ্টা করে এআই; সে অনুযায়ী অ্যাপের মাধ্যমে সতর্কবার্তা পাঠায় কৃষকের কাছে।

ফসলি জমি কতটা সমতল এবং শস্যের বাজরমূল্যের ভিত্তিতে একটি ফাঁদ দিয়েই কয়েক হেক্টর থেকে শুরু করে একশ হেক্টরের বেশি জমিতে নজর রাখা সম্ভব বলে দাবি করেছেন স্টেফানচেক। জমির অবস্থা আর ফসল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন আকার ও নকশার ফাঁদ আছে ট্র্যাপভিউয়ের।

স্টেফানচেক বলছেন, কখনো কখনো কেবল একটি পোকার কারণেই সতর্কবার্তা জারি করতে পারে ট্র্যাপভিউয়ের এআই। আবার কিছু ক্ষেত্রে কয়েকশ কীটপতঙ্গের উপস্থিতিতেও কোনো সতর্কবার্তা জারি করবে না এআইটি।

এ ছাড়া কখন কোথায় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে সে পরামর্শ দিতে পারে ট্র্যাপভিউয়ের এআই। স্টেফানচেকের দাবি, রাসায়নিক স্প্রে এবং খেতে কৃষকের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারবে তাদের প্রযুক্তি।

কৃষকের খেতে যাতায়াত থেকে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এবং রাসায়নিক কীটনাশকের উৎপাদন ও পরিবহন কমিয়ে আনার মাধ্যমে এ প্রযুক্তি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাতেও ভূমিকা রাখতে পারে বলে দাবি স্টেফানচেকের।

চাহিদা কমবে রাসায়নিক কীটনাশকের

খাদ্যশস্য উৎপাদন খাতে প্রযুক্তির সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে স্টিভ এডিংটনের মত, এআই যদি বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতা করতে পারে, তবে সেটা অবশ্যই ভালো কিছু হবে।

আন্তঃসরকার গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড বায়োসায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল’-এর জৈবকীটনাশক গবেষক দলের প্রধান তিনি।

পৃথিবীতে প্রতি বছর ২০ লাখ টন কীটনাশক ব্যবহার করা হয় জানিয়ে এডিংটন বলেন, “আমরা যদি কীটপতঙ্গ, রোগ আর জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যেই টেকসইভাবে খাদ্যশস্যের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চাই, তবে ফসলি জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশকের পরিমাণ কমানো অতি গুরুত্বপূর্ণ।”

সিএনএন জানিয়েছে, বর্তমানে ৫০ জন কর্মী আছে ট্র্যাপভিউয়ের। সেপ্টেম্বর মাসে ১ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে কোম্পানিটি।

তবে, কৃষিখাতে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ট্র্যাপভিউ একাই এআই ব্যবহার করছে– এমন নয়।

সৌরশক্তি নির্ভর ফাঁদ ‘আইস্কাউট’ বানিয়েছে পেসসেল ইন্সট্রুমেন্টস। অন্যদিকে কীটপতঙ্গের পাখা ঝাপটানোর আওয়াজ শুনে প্রজাতি চিহ্নিত করতে পারে ফার্মসেন্স-এর ফ্লাইট সেন্সর।

কীটপতঙ্গ মোকাবেলার প্রচলিত কৌশলে সাধারণত ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে সক্রিয় হন কৃষক; প্রতিরোধে নয়। ট্র্যাপভিউয়ের মত কোম্পানিগুলো ভিন্ন পথে হাঁটছে।

এফএও কৃষি কর্মকর্তা বুইউং হাদি বলেন, “এ ধরনের প্রযুক্তি থেকে যে বার্তা এবং পরামর্শ আসছে সেগুলো সাজানোর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যেন কৃষক আতঙ্কিত হয়ে অবিবেচকের মতো কীটনাশক প্রয়োগ শুরু না করেন, যা শুরু থেকেই এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল।”

২০১২ সালে অভিষেকের পর থেকে ৫০টি দেশে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি ডিভাইস বিক্রির দাবি করেছে ট্র্যাপভিউ। তবে, মূলত ইতালি, ফ্রান্স, স্পেইন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের কৃষিপণ্য বাজারে বেশি সক্রিয় কোম্পানিটি। আঙ্গুর, টমেটো, জলপাই, ফল, তুলা আর আখের মতো ফসলের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তারা