আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে দোটানায় পড়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের গঠিত দল এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি/প্লাটফর্ম)। সরকারের ছাত্র উপদেষ্টারা বিএনপির সঙ্গে জোট করার পক্ষে অবস্থান নিলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও সাধারণ সদস্যদের বড় একটি অংশ শর্তহীন জোটে নারাজ। তারা বিএনপির কাছে অন্তত ২০টি আসন এবং সাংগঠনিক সহায়তার নিশ্চয়তা চান। অন্যথায় জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা বা এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। খবর সমকালের।
গত ১৩ নভেম্বর মন্ত্রিপাড়ায় এক উপদেষ্টার বাসভবনে এবং পরদিন ১৪ নভেম্বর দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এনসিপির রুদ্ধদ্বার বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এনসিপির রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রায় ৩০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে উপদেষ্টার বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিএনপির সঙ্গে জোটের পক্ষে মত দেন। বিশেষ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আগামী সংসদে এনসিপির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নিরাপত্তার স্বার্থে বিএনপির সঙ্গে থাকার ওপর জোর দেন।
তবে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার দাবি, বিএনপি এনসিপিকে সর্বোচ্চ ৮টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে। এতে দুই উপদেষ্টা এবং শীর্ষ কয়েকজন নেতার আসন নিশ্চিত হলেও দলের বাকিরা বঞ্চিত হবেন। এনসিপির চাহিদা অন্তত ২০টি আসন। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির অসহযোগিতা এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর শঙ্কার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে নেতাদের।
১৪ নভেম্বর দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় উপস্থিত মধ্যম সারির নেতারা মাত্র ৮টি আসনের বিনিময়ে বিএনপির সঙ্গে জোটের তীব্র বিরোধিতা করেন। তাদের মতে, নির্দিষ্ট কয়েকজনকে এমপি-মন্ত্রী বানানো সাধারণ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য নয়। বরং জোটের কারণে দলের নিজস্ব সত্তা ও স্বতন্ত্র রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অধিকাংশ সদস্য ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে মত দেন। এতে ভরাডুবি হলেও ভবিষ্যতে দলের নিজস্ব ভোটব্যাংক তৈরি হবে বলে তারা মনে করেন।
নেতাদের তোপের মুখে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন আশ্বস্ত করেন যে, বিএনপির সঙ্গে জোটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। সম্মানজনক প্রস্তাব না পেলে এককভাবেই লড়বে এনসিপি।
বিএনপির সঙ্গে বনিবনা না হলে বিকল্প হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদসহ সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ‘বিএনপিবিরোধী বৃহত্তর নির্বাচনী সমঝোতা’ গড়ার আলোচনাও চলছে। এনসিপির একটি অংশের মতে, সংস্কার ও গণভোট ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে তাদের অবস্থানের মিল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এনসিপি ও জামায়াত একে অপরকে ৪০-৫০টি আসনে ছাড় দেওয়াসহ কৌশলগত সমর্থন দিতে পারে।
বামপন্থি জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের টানার চেষ্টাও করছে এনসিপি। তবে গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির জোটে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মতো দলগুলোকে পাশে চাইছে এনসিপি।
এনসিপির একাধিক নেতা অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছেন যে, তারা গত এক মাসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তবে এসব বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সুরাহা হয়নি।