বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়ে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কারণে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন বিবাদে পরিণত হয়েছে। এর ফলে উভয় দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি বেড়ে গেছে।
বিএনপির সঙ্গে এক সময়ের মিত্র জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েন কয়েক বছর ধরে চলছিল। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর দুই দলের সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বিবাদ মূলত “সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে” প্রশ্নে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, জামায়াত বিভিন্ন সংসদীয় আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর ফলে বিএনপির মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে এবং আস্থাহীনতা বাড়ছে।
সংস্কার নিয়ে বিবাদ-
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দ্রুততম সময়ে ন্যূনতম সংস্কার করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে, তবে জামায়াত শুরু থেকে বলছিল যে, প্রথমে সার্বিক সংস্কার এবং পরে নির্বাচন। তবে বর্তমানে তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলছে।
বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, সংস্কার দ্রুত শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। জামায়াতের অবস্থান হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সময় দেওয়ার পক্ষে তারা।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বিরোধ-
গত কয়েক মাসে বিএনপি ও জামায়াতের বিরোধের অন্যতম কারণ ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন। বিএনপি জাতীয় নির্বাচন আগে চায়, তবে জামায়াত স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিতে চায়।
জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিএনপির সন্দেহ-
বিএনপি মনে করছে জামায়াত নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাচ্ছে, যাতে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হতে না পারে। তবে জামায়াত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে যে, তাদের বিএনপির সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই।
নির্বাচন প্রস্তুতি এবং নতুন জোট গঠনের প্রচেষ্টা-
বিএনপির একটি অংশ মনে করে, জামায়াত বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছে এবং এতে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ হতে পারে। জামায়াত সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে এবং কিছু ধর্মভিত্তিক দল নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা করছে।
গণ-অভ্যুত্থানে কৃতিত্ব নিয়ে বিরোধ-
বিএনপি দাবি করে, তাদের দীর্ঘ আন্দোলনের পরেই গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল, তবে জামায়াত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বিএনপির অনেকেই মনে করেন, জামায়াত এই আন্দোলনে ছাত্রদের উৎসাহিত করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরবর্তী পরিকল্পনা-
সাম্প্রতিক সময়ে, ১৩ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পর চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণ প্রধানত নির্বাচনের সময়, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নতুন জোট গঠনের প্রচেষ্টা এবং গণ-অভ্যুত্থানে কৃতিত্বের দাবি নিয়ে বিতর্ক। এই বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন এবং তার আগে সংস্কার নিয়ে দুই দলের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি।