জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংস্কারের ইচ্ছা নেই। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যেসব সংস্কারের জন্য তরুণরা প্রাণ দিয়েছে, সেগুলো নিয়েও তাদের কোনও আগ্রহ নেই। তাই আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” শুক্রবার (৭ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
২৭ বছর বয়সী নাহিদ ইসলাম বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তরুণরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয় এই আন্দোলনের জেরে। এখন নাহিদ ইসলাম সেই আন্দোলনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে রাজনীতিতে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক নাহিদ গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি নতুন গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
গত বছরের আন্দোলনে ৮০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। নাহিদ ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতাকে আন্দোলন থামাতে বাধ্য করার জন্য আটক করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগ দেন নাহিদ।
তবে এনসিপির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি সেই সরকার থেকে সরে দাঁড়ান। বাংলাদেশকে নতুন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার প্রত্যাশা থাকায় সরকার থেকে নাহিদের সরে যাওয়া প্রয়োজনীয় ছিল।
আগামী মার্চের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এবং দেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক শক্তিগুলোর একটি জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বিজয়ী হতে পারে বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে।
নাহিদ বলেছেন, “যদি আমি এবং আমার সঙ্গীরা পরবর্তী সরকার গঠন করতে না পারি, তবুও আমরা একটি রাজনৈতিক শক্তির সূচনা করছি, যা আগামী কয়েক দশক ধরে প্রভাবশালী হবে।”
তিনি বলেন, “কেউ জানতো না যে একটি অভ্যুত্থান হবে, কিন্তু তা ঘটেছে।”
নাহিদ বলেন, “আমি আন্তরিকভাবে আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে আমরা এবার জয়ী হবো। কিন্তু এই নির্বাচন পৃথিবীর শেষ নয়… আমাদের লক্ষ্য হলো এই শক্তিটিকে আরও ৫০, ১০০ অথবা আরও বেশি বছর ধরে ধরে রাখা।”
এনসিপি নিজেকে একটি বৃহৎ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। তবে দল গঠনের পর থেকেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে। গত মাসে দল গঠনের কয়েক দিনের মধ্যেই একজন সমকামী অধিকার কর্মীকে দলের নেতৃত্ব কমিটি থেকে সরানো হয়। নাহিদ বলেছেন, “আমরা অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাস করি, কিন্তু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নীতিমালা দ্বারা নির্ধারিত কিছু সীমা রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা নারীদের এগিয়ে এনেছি এবং সব বর্ণ ও ধর্মের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছি। আমরা নিশ্চিত করব যে সব নাগরিক তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে।”
এনসিপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। বিএনপির যুক্তি, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে একটি সরকার গঠনের জন্য দ্রুত নির্বাচন প্রয়োজন। তবে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আমাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়, কিন্তু এটি সত্য নয়।”
তিনি আরও বলেছেন, হাসিনার পতনের পর দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন “সম্ভব নয়।”
এনসিপির আরেকটি লক্ষ্য হলো গণপরিষদ গঠন। এই পরিষদ বাংলাদেশের সংবিধানের গোড়া থেকে সংস্কার করবে এবং স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। নাহিদ বলেছেন, “আমরা একটি বৃহৎ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দল গঠন করতে চাই, যেখানে সবাই অংশ নিতে পারবে।”
তবে দল গঠনের পর থেকেই এনসিপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে। গত মাসে দল গঠনের কয়েক দিনের মধ্যেই একজন সমকামী অধিকার কর্মীকে দলের নেতৃত্ব কমিটি থেকে সরানো হয়। নাহিদ বলেছেন, “আমরা অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাস করি, কিন্তু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নীতিমালা দ্বারা নিরপিত কিছু সীমা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নারীদের এগিয়ে এনেছি এবং সব বর্ণ ও ধর্মের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছি। আমরা নিশ্চিত করব যে সব নাগরিক তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে।”