রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ছয় মাস পর এসে এসব ঘটনায় একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের আভাস রয়েছে। তাদের সন্দেহ, জাতীয় সংসদ নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা কিংবা দেশে ভিন্ন কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের শীর্ষ নেতারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেন, আগামী সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে দলের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও বিএনপির একটি দল সাক্ষাৎ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সেই সাক্ষাতের তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
বৈঠকে বিএনপির নেতারা সারা দেশের দলীয় নেতা-কর্মীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন যে, তারা যেন কোনো ধরনের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হন।
বিএনপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতা-কর্মীরা যেন কোনোভাবে জড়িত না হয়। আমাদের প্রত্যাশা, দেশ এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে এই নির্দেশনা দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী অক্ষর অক্ষরে পালন করবে।’
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে বিএনপি একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে দেশের চলমান পরিস্থিতির ওপর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ এবং গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে অশালীন মন্তব্যের কারণে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এর ফলে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে তাদের স্মৃতি, মূর্তি ও নামফলক ভাঙার মতো ঘটনাগুলো ঘটছে।’
বিএনপির নেতারা মনে করেন, সরকার যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশে আরও নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় উগ্র শক্তির উত্থান ঘটতে পারে এবং ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনাও দেখা দেবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। দলটি মূলত চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায়।
এ লক্ষ্যে বিএনপি শিগগিরই জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সম্ভাব্য তারিখ আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি মনে করে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, *‘গণ-অভ্যুত্থানের পর যে পরিবর্তন, যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল, নৈরাজ্য করে তা কখনো পূরণ করা যাবে না। জনগণ এখন এসব বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না।’
বিএনপির দাবি, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের পরিকল্পনার অভাবে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে এবং এতে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। বিএনপির নেতাদের মতে, একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ যদি আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তাহলে তা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ছয় মাসেও অন্তর্বর্তী সরকার বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের আইনের আওতায় আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে জনগণ নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। তবে তারা কোনো ধরনের সহিংসতা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির পক্ষে নয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়তে পারে বলে বিএনপির নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।