BMBF News

মার্কিন শুল্ক ও বাংলাদেশের অর্থনীতি: কতটুকু প্রভাব পড়বে?

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, বলছেন বিশ্লেষকরা।

হোয়াইট হাউজের প্রকাশিত তালিকা অনুসারে, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪% শুল্ক আরোপ করে, এমন দাবি করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে, যা আগামী ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে গড়ে ১৫% শুল্ক ছিল, যা নতুন নীতির ফলে ৫২% এ উন্নীত হবে। এতে বাংলাদেশি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ক্রেতারা তুলনামূলক কম শুল্কযুক্ত দেশগুলোর (যেমন কেনিয়া, মিসর, হন্ডুরাস) দিকে ঝুঁকতে পারে।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৭৪০ কোটি ডলারই তৈরি পোশাক। নতুন শুল্কের ফলে এই খাতে রপ্তানি কমার আশঙ্কা রয়েছে।

অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, বাংলাদেশের গড় শুল্কহার মাত্র ৭-৮%। তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ৭৪% শুল্কের হিসাব কীভাবে করল, তা স্পষ্ট নয়। মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস বলছে, শুধু শুল্ক নয়, অন্যান্য বাণিজ্যিক নীতি ও মুদ্রা বিনিময় হারও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের করণীয় হিসেবে দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক হার কমানোর চেষ্টা করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে ইউরোপ, কানাডা, চীন, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিতে হবে। ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

স্থানীয়ভাবে কাঁচামালের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে, যাতে শুধু তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কৌশলগত কূটনীতি, বিকল্প বাজার অনুসন্ধান এবং শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব।