BMBF News

শিক্ষার্থীদের নজর এরদোয়ান, ইমরান খান, কেজরিওয়ালের মডেলে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি চলতি মাসের মধ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। দলের কাঠামো, গঠনতন্ত্র, নাম ও প্রতীক নির্ধারণ নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে সব সিদ্ধান্ত।

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত এই নতুন রাজনৈতিক দলটি ‘মধ্যপন্থা’র দল হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী। শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “দলটি কোনো বাইনারি প্রসেসের মধ্যে থাকবে না, মতাদর্শভিত্তিক বিভাজন থাকবে না। আমাদের সামাজিকভাবে ঐক্যের জায়গাটা গড়তে হবে।”

সাম্য, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের অঙ্গীকার:

ছাত্রদের নতুন দল গঠনের কাজটি তত্ত্বাবধান করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা চান, বাংলাদেশে প্রচলিত বামপন্থি কিংবা ডানপন্থি রাজনৈতিক ধারার বাইরে থেকে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, “আমরা মধ্যমপন্থি রাজনীতির কথা বলছি। বাম-ডান বিভাজনের মধ্যে না গিয়ে আমরা বাংলাদেশ প্রশ্নে এক থাকতে চাই। ইসলাম ফোবিয়ার রাজনীতি, উগ্র ইসলামপন্থি বা উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যেও আমরা নেই।”

দলটি জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার বা ধর্মভিত্তিক কোনো নির্দিষ্ট আদর্শে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “আমরা সাম্য, ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের কথা বলছি। বহুত্ববাদকে স্বীকার করেই কীভাবে একটি রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

এরদোয়ান, ইমরান খান ও কেজরিওয়ালের মডেলে অনুপ্রেরণা:

নতুন এই দল কতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করবে, তা বলা কঠিন হলেও বিশ্ব রাজনীতিতে এরকম অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে নতুন দলগুলো অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তুরস্কের রিচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একে পার্টি, পাকিস্তানের ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির সাফল্য শিক্ষার্থীদের এই রাজনৈতিক দলকে অনুপ্রাণিত করছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “এসব দল কীভাবে জনগণের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে, কী ধরনের কৌশল নিয়েছে, তাদের গঠনতান্ত্রিক কাঠামো কেমন ছিল -এসব আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”

তিনি আরও বলেন, “এরদোয়ানের দল ইনসাফের (ন্যায়বিচারের) ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, আমরাও একই বিষয় বলছি। অন্যদিকে, আম আদমি পার্টি দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষিত তরুণদের আকৃষ্ট করেছে। আমরা সেগুলোও বিশ্লেষণ করছি।”

নেতৃত্বে কারা থাকবেন?

দলটির শীর্ষ পদে কে থাকবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম এ পদে আলোচনায় থাকলেও, তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরাই মূল নেতৃত্বে থাকবেন বলে জানা গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মুজমদার বলেন, “তরুণদের পাশাপাশি অভিজ্ঞদেরও দলের বিভিন্ন পর্যায়ে জায়গা দেওয়া হবে। উপদেষ্টা প্যানেলে এবং অন্যান্য কমিটিতেও তরুণ ও সিনিয়রদের সমন্বয় থাকবে।”

সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহেই নতুন দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে আগামী ডিসেম্বরে সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলটি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। নাগরিক কমিটির নেতারা মনে করেন, রাজনৈতিক যাত্রায় অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলো তাদের পাশে থাকবে। তবে কোনো জোটের অংশ হওয়া বা নির্বাচনি ঐক্য গঠনের চিন্তা আপাতত নেই। এককভাবেই বড় রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে চায় তারা।