নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারি কলেজে কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীদের স্ব স্ব পদে ও কলেজে বয়স শিথিল করে চাকুরী রাজস্বখাতে স্থানান্তর ও বৈষম্য থেকে মুক্তির দাবিতে ২৯শে ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনা সভারতাদের কাছ থেকে বেশি শ্রম দিয়ে যে জায়গায় একটি কলেজে আয়োজন করেন সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন।
সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের আহ্বায় মো: আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মো: ফরিদুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গনসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েত সাকি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোঃ আজিজ সহ আরো অনেকে।
আলোচনা সভা ও দাবি আদায় অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশের স্বনামধন্য ৩৩০ টি (পূর্বের/পুরাতন) সরকারি কলেজে ০১ থেকে ৩৫ বছর যাবৎ সরকারি কলেজে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে বেসরকারিভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের আলোকে স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়ের নিয়োগের মাধ্যমে সুনামের সাথে চাকুরী করে আসছি। কিন্তু আমাদের চাকুরী রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা হচ্ছে না। ১৯৯১ এর নিয়োগ বিধিতে স্ব-স্ব কলেজের শুন্য পদের ১০০% এর ভিতর ৬০% নিয়োগ কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রদান করে মহাপরিচালক মহোদয়ের নিকট সুপারিশসহ প্রেরণ করতেন, তখন আমাদের মধ্যে থেকে যারা সিনিয়র হিসেবে কর্মরত থাকতো তাদের মধ্যে কয়েক জনের চাকুরী রাজস্ব খাতে নিতো যা ২০০৪ খ্রি. পর্যন্ত ছিল, অবশিষ্ট ৩০% মাউশির মহাপরিচালক নিয়োগ দিতেন। কিন্তু ২০১৩ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকা ১৯৯১ এর নিয়োগ বিধি সংশোধন করে আমাদেরকে বঞ্চিত করে কেন্দ্রীয়ভাবে ১০০% নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় আমরা ২০০৪ ইং সালের পর থেকে রাজস্ব খাতের নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হই। আমাদের অনেকের বয়স ৩০ বছরের অধিক হয়ে গেছে। আমরা সামান্য মজুরীতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা সরকারি কলেজের সকলেই যে দপ্তরে চাকুরী করছি সেখানে আমরা সরকারি দায়িত্ব পালন করছি। বিভিন্ন কলেজ জাতীয়করণ/ সরকারিকরণ করা হলেও আমাদের বিষয়টি মানবিক বিবেচনা করা হচ্ছে না। ২০১৩ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল ও আমাদের জাতীয়করণের জন্য মহামান্য হাইকোট ডিভিশনে রিট পিটিশন করা হয়। কিছু কিছু মামলা ইতোমধ্যে আমাদের পক্ষে রায় ঘোষনা দিয়েছে। ২০১৭ সালে মামলার প্রেক্ষিতে কিছু পদ শূন্য রেখে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর নিয়োগ সম্পূর্ণ করে। সমগ্র বাংলাদেশের কলেজসমূহের সূচনালগ্নে যে পদ সৃষ্টি হয়েছিল তা দিয়ে বর্তমান কলেজের অনার্স মাস্টার্স বিভাগসমূহ পরিচালিত হচ্ছে ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে না পেরে আমাদের মাউশির পরিপত্র মোতাবেক কলেজ অধ্যক্ষগণ নিয়োগ প্রদান করেন। আমরা অত্যন্ত সুনামের সাথে সরকারি কলেজের সরকারি দায়িত্ব দীর্ঘবছর যাবৎ পালন করে আসছি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের স্বারক নং- ওএম-১৫১-জিএ/২০০৮/৫৫৪৩১/১২জিএ, ১৪/১১/২০০৮ তারিখে ১৯৯১ সালের নিয়োগ বিধি ৬(৩) (ক) ধারা মোতাবেক অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আচরণ ও কর্ম সন্তোষজনক হওয়ায় চাকুরী স্থায়ী করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের স্বারক নং- ওএম-৯৪-জি:/২০১১ (অংশ-১)/২৮৮৩৩/১০, ০৯/০৫/২০১৭ খ্রি. মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রীট পিটিশন নং-৩২৭৫/২০১৭ ও ৩১১৭/২০১৭ বিচারাধীন থাকায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদ সংরক্ষণ করা হয়। মামলা নম্বর: ৭৫৩৪/২০১৭ বয়স শিথিল করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের আদেশ দেন মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোট ডিভিশন। এতে সরকার মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আফিলিয়েট ডিভিশনে (২৯৩২/২০১৯) আপিল করেন। কিন্তু আমরা এখনও কোনো প্রকার আশার বাণী পাইনি। দীর্ঘদিন যাবৎ অস্থায়ীভাবে কর্মরতদের ব্যতিরেকে ২০১৩ সালে ১৯০০ এবং ২০২৩ সালে ৪০০০ জন কর্মচারীকে মাউশি কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বঞ্চিত করে নতুন জনবল নিয়োগের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
আমাদেরকে বঞ্চিত করে নতুন জনবল নিয়োগের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ আরও আনশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা নিরুপায় হয়ে আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সহানুভূতির সহিত দৃষ্টি কামনায় গত ২১/০৮/২০২৪খ্রি. তারিখে একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালনসহ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে স্মারকলিপি প্রদান করি। তিনি আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করবেন মর্মে তাঁর প্রেস সচিব দ্বারা মৌখিক আশ্বাস প্রদান করেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার মৌখিক আশ্বাস পেয়ে আমরা আমাদের কর্মসূচী সমাপ্ত ঘোষণা করি। পরবর্তীতে আমাদের বিষয়ে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ না হওয়ায় গত ০৪/০৯/২০২৪খ্রি. পুনরায় প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিবের কার্যালয়সহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়গণকে স্মারকলিপি প্রদান করি এবং ২৯ অক্টোবর ২০২৪খ্রি. বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিকদের নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনায় একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করি কিন্তু দুঃখের বিষয় ২০১৩ সাল থেকে অদ্যবধি মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী, ১৮দিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন, সাংবাদিক সম্মেলন, নিজ নিজ কর্মস্থলে ১ঘন্টা প্রতিকী কর্মবিরতিসহ একাধিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে আমাদের দাবী আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে গেলেও আমাদের বিষয়ে কোন সরকারই এখনও পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর দ্বারা আমাদের নায্য দাবি আদায় না হলে ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচী গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা অব্যহত রাখবো।
দাবীসমূহ: (১) সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীদের চাকুরী রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে; (শূন্য পদের বিপরীতে এবং নতুন পদ সৃজনের মাধ্যমে স্ব স্ব কলেজে অস্থায়ীভাবে কর্মরতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাজস্বখাতভূক্ত করতে হবে।) (২) কর্মরতদের ব্যতিরেকে নতুন নিয়োগ বন্ধ করতে হবে, অস্থায়ীভাবে কর্মরতদের চাকুরীর নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। (৩) রাজস্বতভূক্ত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতাদি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।