BMBF News

সিনহা হত্যার দ্রুত বিচারের প্রত্যাশা মায়ের

১২

নিউজ ডেস্ক:
পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার দ্রুত বিচারের জন্য আশা প্রকাশ করেছেন তাঁর মা নাসিমা আক্তার।

রাজধানীর উত্তরায় সোমবার (১০ আগস্ট) মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের বাসায় তার মা নাসিমা আক্তারের সঙ্গে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন নাসিমা আক্তার।

দিনি বলেন, আমার ছেলে পজিটিভ ছিল। সবসময় ‘বি’ পজিটিভ। আমিও ‘বি’ পজিটিভের পক্ষে আছি। আপনাদের সাংবাদিকদের লেখা আমি পড়ছি। আমার হৃদয়টা ছিঁড়ে যাচ্ছে। দেশের সুন্দর পরিবেশ আপনারাই আনবেন। আমরাই আনব। আমাদের যে ছোট ছোট বাচ্চা আছে আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা সবাই সহযোগিতা চাই। এই যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডটি ঘটল। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না হয়। প্রত্যেক মায়ের প্রতিনিধি হয়ে বলব। এই ধরনের ঘটনা যেন আর না হয়। সবাই যেন সচেতন থাকেন। মা নাসিমা আক্তার বলেন, সিনহা মেজর না কী তা কখনও পরিচয় দিত না। তার যে ব্যবহার তা দিয়েই সবকিছু করার চেষ্টা করত। ওর কাজগুলোকে আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করি। তবে আমি বলতাম, বাবা তুমি যে মেজর তা তুমি পরিচয় দাও না কেন? সিনহা বলত, একটা মানুষের যে মানবিক গুণাবলি থাকে তা দিয়েই যদি মানুষ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারে এর চেয়ে আর কী বড় হতে পারে। তখন বলতাম, বাবা তুমি যে এত এত কোর্স করেছ। সেনাবাহিনীতে কাজ করেছ? সিনহা বলেছিল মাম্মি পাওয়ার। পাওয়ার কী? মানুষের হৃদয়ের মধ্যে থাকব। কাজ করব। মানুষের জন্য কাজ করব। সেটা বলতে হবে কেন? সিনহা আসলে বলায় নয় কর্মে বিশ্বাসী ছিল।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা নাসিমা আক্তার বলেন, আমার ছেলে দেশকে নিয়ে অনেক ভাবত। আমাকে বলত, আমরা যদি দেশে ভালো কিছু রেখে যাই তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটা অনুসরণ করবে। আমার ছেলের প্রত্যেকটি কাজে আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল। ভেতরে ভেতরে আমি খুবই গর্ববোধ করতাম। ও শুধু কাজ করতেই চাইত। নিজ বাসায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে সংবাদ সম্মেলনে নাসিমা আরও বলেন, আত্মীয়স্বজন বলত ও কী কাজ করে ওর কি কোনো টাকা-পয়সা আসে না? কিন্তু সিনহা আসলে সবসময় ক্রিয়েটিভ কাজ করতে চাইত, সবসময় সারপ্রাইজ দিতে চাইত কাজের মাধ্যমে। ও বলত, আমি আমার মনের খোড়াকের জন্য কাজ করি যাতে মানুষ উপকৃত হয়। একটা ডকুমেন্টরি করছি এখনও বলার মতো কিছু হয়নি, যখন হবে তখন বলব। আমি শতভাগ আস্থা নিয়ে বসে আছি, আমার ছেলে কাজ করছে। কাজ শেষে ফিরবে। উল্লেখ করেন তিনি। দেশের অবস্থা কেমন জানি, খালি শুধু চিন্তা আমার ছেলে ডাক্তার হবে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তোর জন্য তবে আমরা মায়েরা বলির পাঠা হবো। উত্তরে ফান করে বলত, ডাক্তার হলে ইঞ্জিনিয়ার হলে তোমরা খুশি। কিন্তু তোমাদের কারণে আমার মনে যে ইচ্ছে সেটা তো অপূর্ণতাই রয়ে গেল, হোয়াই ও হোয়াই, বলত ফোন করে। নাসিমা আক্তার বলেন, সিনহা খুব স্পিডে গাড়ি চালাত। কাজ শেষে সাধারণত বাসায় ফিরত। সেদিন বাসায়ও ফিরছিল না ফোন ধরছিল না ব্যাকও করছিল না। রাত ১২টা আনুমানিক। এক ভদ্রলোক ফোন করলেন। বললেন সিনহা কী হয়, কী করে। কয় ছেলেমেয়ে। উত্তর দিয়ে জানতে চাইলাম এত প্রশ্ন করছেন, আপনি কে? তখন তিনি বলেন, আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি টেকনাফ থানার ওসি।

ভাবলাম ছেলে তো স্পিডে গাড়ি চালায়। আবার কিছু হলো কিনা। বললাম, আমার ছেলে তো ফোন ধরছে না ওকে একটু দেন। ফোনটা বাজছে কিন্তু ধরছে না। ওসি বলে হ্যাঁ একটু দূরেই আছে। দেয়া যাবে। বলেই রেখে দেন। কিন্তু বারবার ফোন দেই আর কেউই ফোন ধরে না। একসময় দুই মেজরের নম্বর দিয়েছিল সিনহা। ফোন দিলাম মেজর মোহসিনকে। জানতে চাইলাম সিনহার খবর। বললাম ফোন ধরছে না। পরে জানাল টেনশন কইরেন না। সিনহা ঠিক আছে। পরদিন ১০টা ১১টা বাজে। বাসায় পুলিশ আসে। উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। তারা মেজর সিনহার বাসা কিনা জানতে চেয়ে খোঁজ নেয়। রাজনীতির সাথে জড়িত কিনা দেশের বাড়ি কোথায় জানতে চায়। বলি রাজনীতিতে জড়িত নয় শতভাগ নিশ্চিত। ওরা ভালো ব্যবহার করে চলে যায়। তারাও কিছু জানায়নি। সিনহা হত্যার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে সিনহার মা নাসিমা আক্তার বলেন, আমি সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী আমার সাথে কথা বলেছেন। সেনাপ্রধান, নৌবাহিনী প্রধান খোঁজ নিয়েছেন আশ্বাস দিয়েছেন।

সিনহা মো. রাশেদ খানের বিষয়ে বোন শারমিন শাহরিয়া বলেন, আমি খুবই গর্বিত যে ওর মতো একটা ভাই আমার ছিল। যাকে এত মানুষ ভালোবেসেছিল, এত মানুষ ভালোবাসে। ভাই সিনহার মৃত্যুর পর তা আমি দেখতে পেয়েছি। তিনি বলেন, আমি ওকে বলতাম, তুমি হচ্ছো মানুষের হৃদয়ের রাজপুত্র। সেটা সে (সিনহা) প্রæভ করেছে নিজের ভালোবাসা আর মানবিক গুণাবলি দিয়ে। আমি বিচারের কথা বলতে এখানে আসিনি। যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, যে বিচারটা হবে। শারমিন বলেন, আমাদের একটা আবেদন থাকবে সঠিক তদন্ত করে দ্রুতই যেন বিচার পাই। এটা যেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, অন্যান্যের যেন মোটিভেট করে যে, আমরা আসলেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের দেশে আইন আছে। আমাদের দেশে বিচার হয়। এটাই আমরা চাই।