সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে হামলা চালাতে শুরু করেছে ইসরায়েল। ইতিমধ্যে অবরুদ্ধ গোলান মালভূমি পেরিয়ে বাফারজোনে প্রবেশ করে তা দখলে নিয়েছে দেশটি। এ ছাড়া বিভিন্ন সামরিক স্থাপনাতেও হামলা চালানো হচ্ছে। তাদের দাবি, সিরিয়ার অস্ত্র যেন কোনো উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর হাতে না যায় সেজন্য এই হামলা চালিয়েছে তারা।
সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি দল দামেস্কের ২৫ কিলোমিটার কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।তবে, এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
অন্যদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদের পতনের পর এখন পর্যন্ত ৪০০টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তারা বাফারজোনে আগ্রাসন চালিয়েছে। ১৯৭৪ সালের পর থেকে এই অঞ্চলটিই দুই দেশকে আলাদা করে রেখেছিল।
সর্বশেষ পটপরিবর্তনের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল আগের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কারণ আসাদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শক্তির জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হতো ইরান এবং হিজবুল্লাহকে।
বিবিসি’র আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন এর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র ও নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ও ইরানকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিল ইসরায়েল। অন্যদিকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, আসাদকে রক্ষা করা তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে হামলা করলে গাজা যুদ্ধের সূচনা হয় যা লেবাননেও ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ে আসাদের সহযোগী হেজবুল্লাহর ওপর। হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন। বছরব্যাপী লড়াইয়ের পর গত ২৭শে নভেম্বর হেজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। সেদিনই বিস্ময়করভাবে হামলা করে দ্রুত আলেপ্পো দখল করে নেয় হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস এর নেতৃত্বে সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী। এর ১২ দিনের মাথায় ক্ষমতা ও দেশ ছাড়তে হলো সিরিয়ার শাসককে।
ইরান এবং হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের জোরদার হামলার ‘প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে আসাদের পতন ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে জেরেমি বোয়েন জানাচ্ছেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও জো বাইডেন দুইজনই বাশার আল আসাদের পতনের জন্য কৃতিত্ব দাবি করছেন। তারা ভূমিকা রেখেছেন ঠিকই, তবে তা যতটা না পরিকল্পনা অনুযায়ী, তার চেয়ে বেশি ঘটনাচক্রে হয়েছে। এর বিনিময়ে তাদের প্রাপ্তির খাতায় যোগ হতে পারে, ইরানের সামরিক যোগাযোগ ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলার মতো অর্জন।
ইসরায়েল বলছে, তারা শুধুমাত্র সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। এর মধ্যে অস্ত্রাগার, বিমাবন্দর, নৌঁঘাটি ও গবেষণাকেন্দ্রও রয়েছে। সিরীয় ভূখণ্ডে ইসরায়েলের ট্যাংকও প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে সিরীয় নিরাপত্তা বাহিনী।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার বলেছেন, ইসরায়েল শুধুমাত্র দূরপাল্লার রকেট সাইট রাসায়নিক অস্ত্র মজুদাগার লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। কোনো উগ্রপন্থী সশস্ত্রগোষ্ঠী যেন এই অস্ত্র দখল করতে না পারে সেজন্যই এগুলো ধ্বংস করছে ইসরায়েল।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া থেকে ইসরায়েল কী চায় তা এখনো স্পষ্ট নয়। সরকারিভাবে কোনো বিবৃতিতেও দেওয়া হয়নি। নেতানিয়াহু সরকারের বিরোধী বেনি গান্তজ বলেছেন, ইসরায়েলের সামনে এক ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে। সিরিয়ার দ্রুজ, কুর্দসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করা উচিত ইসরায়েলের। যারা আসাদ সরকারের বিরোধিতা করেছে তাদের সঙ্গেই সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলকে দেওয়া সাক্ষতকারে ইসরায়েলি এক গবেষণ জানান, সিরিয়ায় এখন বেশ কয়েকটি এলাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। সেগুলো দখলে নিতে পারে বিদেশি শক্তি। যার মধ্যে থাকতে পারে ইসরায়েলও।