মেহেদী হাসান, দুমকী (পটুয়াখালী):
পটুয়াখালীর দুমকীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফেলতি আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে সাড়ে তিন বছর ধরে একটি রাস্তা পাকাকরণের কাজ অবহেলায় পড়ে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিতে দৈনন্দিন পথচারীদের যেমন বাড়ছে দুর্ভোগ সেই সাথে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী।
উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত থানা ব্রীজের পশ্চিম পাড় গোলাম সরোয়ার হাফিজীয়া মাদ্রাসা হয়ে পশ্চিম শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ে থাকায় জনসাধারণের চলাচলের ভোগান্তি এখন চরম আকারে ধারন করেছে । গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিতে দৈনন্দিন শত শত মানুষের চলাচল। সড়কটিতে রয়েছে গোলাম সরোয়ার হাফেজী ও নুরানি মাদ্রাসা, পশ্চিম শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ কয়েকটি মসজিদ ও গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটির নির্মান কাজ পড়ে থাকায় মাঝে মাঝে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বৃষ্টি হলে পানি জমে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারীরা। এছাড়াও মাঝে মাঝে ইটের খোয়া স্তুপ করে ফেলে রাখায় অটো, রিকশা, ভ্যান এমনকি মোটরসাইকেল চলাচলের ও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে স্কুল, মাদ্রাসাগামী শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় গামী কর্মচারী, কর্মকর্তাসহ শত শত সাধারণ পথচারীরা। এমতাবস্থায় অতিদ্রুত কাজ সম্পন্নকরণের দাবী এলাকাবাসীর।
জানা যায়, সড়কটি পাকাকরনের জন্য ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারী টেন্ডার আহ্বান করেন এলজিইডি এবং ১১ ফেব্রুয়ারি নিয়ম মোতাবেক কাজটি সম্পন্ন করার অনুমতি পায় “পল্লী স্টোর ” নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত নির্মানের সময় বেঁধে দিলেও সাড়ে তিন বছরের অধিক সময়েও শেষ হয়নি সড়কের নির্মান কাজ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে এলাকাবাসী।
আরও জানা যায়, একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উপজেলার পাংগাশিয়া, লেবুখালি, লালখার ব্রীজ, মুরাদিয়া ও জলিশাসহ ৬ টি রাস্তা পাকাকরণের কাজ পায়। সে সব রাস্তার কাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি বলে জানা যায়। এছাড়াও রয়েছে নিন্ম মানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার ও স্থানীয় বাসিন্দা শামিম খান বলেন, বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। এছাড়াও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী বিধায় কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এ দুর্ভোগের বিষয়ে লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করলেও আশানুরূপ ফল এখনও পাইনি।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা ও উত্তর শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। রাস্তাটিতে কোন যানবাহন চলাচলের উপযোগী না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী। তাই রাস্তাটি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে পাকাকরনের কাজ সম্পন্ন করার দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “পল্লী স্টোর” এর সত্ত্বাধিকারী বাদল সরোয়ারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লাইসেন্স আমার নামে ঠিকই তবে কাজটি করে অন্য দু’জন। তাদেরকে কাজটি করার জন্য বেশ কয়েকবার বলছি কিন্তু কোন ভাবেই তাদের দিয়ে কাজ করাতে পারছিনা। যাইহোক বৃষ্টি কমলেই কাজটি সম্পন্ন করে দেবো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আজিজুল হক বলেন, আমরা ইতিপূর্বেই সেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য টেন্ডার বাতিল করে রি-টেন্ডার আহবানের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছি।
দুমকী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশিদ হাওলাদার বলেন, দীর্ঘ তিন বছর পূর্বে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর টেন্ডার সম্পন্ন হয় কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন না করে ফেলে রেখেছে। আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত ভাবে কাজ সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করেছি, উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করেছি, এমনকি প্রকল্প পরিচালককেও অবহিত করেছি। রাস্তার কাজ ফেলে রাখায় একদিকে জনভোগান্তি বাড়ছে অন্যদিকে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ না করলে আমি এলাকার জনগনকে সাথে নিয়ে মানববন্ধন করবো বলেও জানিয়েছি কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।