সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ‘মিথ্যাচার’ করার অভিযোগ তুলে এ সপ্তাহের মধ্যে তার পদত্যাগের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। সমাবেশে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও সংবিধান বাতিলসহ পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সমাবেশ শেষে বিকাল ৫টায় মিছিল নিয়ে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে যান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ সমাবেশে বলেন, “আমরা শহীদ মিনার থেকে বিপ্লব শুরু করেছিলাম। সেই বিপ্লবের ভয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। আর এখন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে জনতার সঙ্গে প্রতারণা করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আপনি ৫ অগাস্টে যা বলেছেন, তা এখন কার নির্দেশে ভুলে গিয়ে নতুন কথা বলছেন? আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—খুনি হাসিনা যেভাবে পালিয়েছেন, চুপ্পুকেও পালাতে হবে। দেশের প্রশ্নে বিপ্লবীরা সব সময় মাঠে আছে।”
ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিষিদ্ধের দাবি জানান মাসউদ। তিনি বলেন, “যে ছাত্রলীগের হাতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সমাবেশে পাঁচটি দাবি ঘোষণা করেন। দাবিগুলো হলো: বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধান রচনা; ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আজীবন নিষিদ্ধ করা; রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করা; চলতি সপ্তাহের মধ্যে ‘প্রোকলেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা; দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচিতদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা।
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা, যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর জানান। সেদিন রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।”
এরপর সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সেই সরকারের শপথ পড়ান।
কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের ‘কোনো দালিলিক প্রমাণ’ তার কাছে নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক বিবৃতিতে এই মন্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তা রাষ্ট্রপতির শপথ লঙ্ঘনের শামিল বলে উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে এই বিক্ষোভ ও সমাবেশ আরও তীব্র হয়।