রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে গভীর রাত পর্যন্ত চলা বিক্ষোভের পর বঙ্গভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে কোনো আন্দোলনকারীকে জড়ো হতে দেখা যায়নি, তবে পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যদের সতর্ক অবস্থান পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী জানান, বঙ্গভবন এলাকায় এখন আন্দোলনকারীদের কোনো অবস্থান নেই। তবে গতকালের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের ডেপ্লয়মেন্ট বাড়ানো হয়েছে।
বঙ্গভবনের সামনে কয়েক ধাপে ব্যারিকেডসহ কাঁটাতারের বেড়া বসানো হয়েছে। সেখানে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। উপ-কমিশনার শাহরিয়ার আলী বলেন, “যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।”
মঙ্গলবার দুপুর থেকে বঙ্গভবনের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও এ সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জানায়।
সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনের সামনের অবস্থান ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন, এসময় পুলিশ লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের সরানোর চেষ্টা করে। সংঘর্ষের ফলে অন্তত তিনজন আহত হন। পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়ে। রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আবার সংঘাত ঘটে, ফলে পুলিশ দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে সরে যায়। সেখানে সেনাবাহিনীর একটি দলও সাঁজোয়া যানসহ পাহারায় অবস্থান নেয়।
এক পর্যায়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেখানে উপস্থিত হন এবং আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে দুই দিন সময় চেয়ে তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি পক্ষ এলাকা ত্যাগ করলেও আরেকটি পক্ষ রাতের মধ্যেই পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকে।
এই অবস্থায় গণঅধিকার পরিষদের নেতা তারেক রহমান ও তার অনুসারীরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। গত ৫ আগস্ট তুমুল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না, সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতির একটি কথায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা শুনেছেন, কিন্তু তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। এ বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতি চাপে পড়েন এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যকে ‘মিথ্যা’ দাবি করে শপথ ভঙ্গের কথা বলেন। এ ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামে।