BMBF News

“যারাই রক্ষক তারাই ভক্ষক”

১৩২
 তাসলিমা খাতুন সাওফা :

 

 

যেকোনো আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারণ অধিকার হরণ। আর কেউ বুঝতে পারুক বা নাইবা পারুক, যার অধিকার হরণ করা হয় বা হয়ে থাকে সেই তো সোচ্চার কন্ঠে বজ্র কঠিন আওয়াজ তুলে অধিকার হরণের বিষয়টি ইস্পাত কঠিন আওয়াজে ফুটিয়ে তোলার দু:সাহস নিয়ে দুর্বার প্রতিরোধের বিষবাষ্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় সমাজের প্রত্যেকটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ।আমরাও আমাদের আইনগত অধিকার হরণ এর বিষয়টি সমাজের প্রত্যেক সচেতন মহলের মাঝে উপস্থাপন করতে যথেষ্ট শ্রম সাধন করে আপ্রাণ চেষ্টা করে আজও আশায় আশায় বুকে পাথর বেঁধে তীর্থের কাকের ন্যায় চাতক পাখিদের মত বসে আছি এক অজানা অচেনা মেঠোপথের কোনো এককোণে।এতকিছু বলার মূল কারণ এনটিআরসিএ( বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কতৃপক্ষের কথা) নামক একটি আজব প্রতিষ্ঠান এর কথা। শুনলে পরে হাসি পায়, এনটিআরসিএ নীতি গল্প শুনায়। বিগত ১১/৭/২০২৪ ইংরেজি তারিখে একটি সংবাদ সম্মেলন করে বৈধ সনদ ধারীদের নিয়োগ না দেওয়ার যত ফন্দি আঁটতে বদ্ধপরিকর ভূমিকা রাখবেন বলে জনসমক্ষে তাঁদের শ্বেতপত্র প্রচার করতে মরিয়া হয়ে দিব্যি সাধু বনে যাওয়ার অপচেষ্টায় নিমজ্জিত হয়েছে। তারই একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র ।সাথে সাথে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল মহান জাতীয় সংসদে ৯৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিগত ছয় মাসে , এই অসত্য বক্তব্য রেখেছেন তারই তীব্র প্রতিবাদে ও নিন্দা জ্ঞাপনে আজ শিক্ষক পরিষদ এর পক্ষ থেকে এই ছোট্ট লিখনী।যাহা অধিকার আন্দোলনের জন্য অনন্য নিদর্শন হিসেবে কাজ করবে এটাই প্রত্যাশা করি ।এখন স্বভাবতই পাঠকদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে প্যানেল প্রত্যাশী শিক্ষক আন্দোলন কেনো এবং কি এমন অধিকার হরণ করা হয়েছে যে আন্দোলন এর প্রশ্ন এসেছে। সেই প্রশ্নের জবাবে বলবো এমন কোনো অধিকার নেই যা এনটিআরসিএ হরণ করে নাই ।

 

নিয়োগ না দেওয়ার সকল ষড়যন্ত্র করেও যখন ব্যর্থতার গহব্বরের নীচে পদাবনত, ঠিক তখনও আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তাদের ষড়যন্ত্রের লেলিহান শিখা বৈধ সনদ ধারীদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রানন্তকর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন ।শুধু তা-ই নয়, যত রকম অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করছে তাতে আমরা সত্যি বিস্মিত ও হতবিহবল এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী বিগত ৩১/৩/২০২৪ ইং তারিখে একটি মাত্র বিজ্ঞাপন দিয়ে ১৯৫৮৬ জনকে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছে। যার চুড়ান্ত নিয়োগের কার্যক্রমে দেখতে পেয়েছি এর মধ্যে প্রায় ৭ হাজার মাধ্যমিক পর্যায় থেকে কলেজ পর্যায়ে নিয়োগ পেয়েছে, অর্থাৎ প্রকারন্তরে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে । এখন প্রশ্ন হলো ৭৮/৭৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষক কি পর্দার আড়ালে বসে চরম দূর্নীতি করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাহা আমরা বৈধ সনদ ধারী চোখে দেখতে পাচ্ছি না। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে গোটা জাতির সামনে কাদেরকে ,কিভাবে, কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার একটা তালিকা প্রকাশ করুন। অন্যথায় জাতির সামনে একদিন এর জবাব চরম নির্লজ্জভাবে দিতে হবে । তাছাড়া সাবেক এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান স্বীকার করেছেন ৬০ হাজারের বেশি জ্বাল নিবন্ধন সনদ নিয়ে চাকরি করছেন। এদের কে কারা নিয়োগ দিল, তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতার মাফকাঠি কি তাহলে আর্থিক যোগান ? যাহা বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। চেয়ারম্যান এর ড্রাইভার জিয়াউর কোটি-কোটি টাকার সম্পদের উৎস কি। ড্রাইভার জিয়াউর কি আদৌও সনদ ও চাকরি দিতে পারে। অবশ্যই নয়,তাহলে পরে যারা সনদ ও চাকরি দিতে পারে তাদেরকে এই চরম দূর্নীতি করার অপরাধে শাস্তি দিতে হবে । নচেৎ আমরা ধরে নিব এখন রক্ষক ভক্ষকের ভুমিকা নিয়ে ব্যস্ত । অর্থাৎ সহজ কথায় এ পর্যন্ত এনটিআরসিএ দেখভালের দ্বায়িত্ব পালনকারী মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীরা এর দ্বায় এড়াতে পারেন না।চরম নির্লজ্জ দূর্নীতি করার বাস্তব প্রমান আবেদন করেছে চাকরি দেওয়া হয়নি, আবার ঐ প্রতিষ্ঠান শুন্য পদ দেখিয়েছে পুনরায় আবেদন করেও চাকরি পাননি, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নিবেন বলে সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি আশ্বস্ত করলেও পরে ঐ ভুক্তভোগী নিবন্ধন সনদ ধারীকে ধমক দেওয়ায় বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখতে পারে নাই। শুধু তা-ই নয় ৩৫+ বয়সের বেশি বয়সী কাউকে চাকরি দেওয়া যাবে না বলে যে ফরমায়েশ চালু করছে, সেখানেও ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৪৪০ জনকে ১ম-৫ম ব্যাচের সনদধারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের কারোরই বয়স ৩৫- হাওয়ার কথা না। অথচ ১২/৬/২০১৮ ইংরেজি তারিখের আগে পাসকৃত (১ম-১২তম)সকল সনদধারী সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী আজীবন অর্থাৎ অবসর গ্রহণ এর আগ পর্যন্ত চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা বহাল থাকবে । শুধু তা-ই নয়, ১ম ও ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ দিলেও ২য় ও ৪র্থ এবং ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ১ম-১২তম সনদধারীদের আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এমনকি ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৫৪ হাজার নিয়োগের এক মহা কর্মযজ্ঞ গোটা জাতির সামনে উপস্থাপন করলেও সেই সংখ্যা ছিল শুভংকরের এক বিশাল ফাঁকি, কারণ মাত্র ১২ হাজারের কাছাকাছি প্রকৃত বেকার নিবন্ধন সনদ ধারী নিয়োগ পেয়েছে, বাকী সবাই ইনডেক্সধারী।এ রকম হাজারো অন্যায় অনিয়মের বিশদ বর্ণনা করা যাবে তারমধ্যে NTRCA’র কতিপয় অনিয়ম উপস্থাপন করলাম :

১।একজনের সনদ অন্য জনে ব্যবহার করে চাকরি করছে । অর্থাৎ একজনের রোল নম্বর অন্য জনে ব্যবহার করছে।

২। ৩৫+ বয়সীদের ১ম-১২তম সনদধারী যারা ১২/৬/২০১৮ খ্রীষ্টাব্দের আগে পাস করেছে তাদের সনদের মেয়াদ আজীবন। যাহা সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চের রায়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে স্পষ্ট করা হয়েছে ।

৩। তৃতীয় গণবিঞ্জপ্তির সময়, যে সব প্রতিষ্ঠান শুন্য পদ দেখিয়েছে, সেই একই প্রতিষ্ঠান ৪র্থ গণবিঞ্জপ্তির সময়ও পদ শূন্য দেখিয়েছে, এমনকি ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতেও পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে । সেখানে যারা একাধিকবারই দরখাস্ত করেছে,ঐ প্রতিষ্ঠানে তাদের চাকরি দেয়া হয়নি বরং বলা হয়েছে ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যায় নি, এটা চরমভাবে নির্লজ্জ মিথ্যাচার। অথচ ৩য় গণবিঞ্জপ্তিতে সুপারিশ না পেয়েও নরসিংদী জেলার পলাশ থানাধীন খুদি মাহমুদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আমিনুল ইসলাম এর চরম দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাঁরই শ্যালিকা “”রাবেয়া সুলতানা “” কে। যাহা শিক্ষক জাতির জন্য চরমভাবে নির্লজ্জজনক।

৪। প্রথম ও তৃতীয় গণবিঞ্জপ্তিতে আবেদনের সুযোগ দিলেও ২য় ও ৪র্থ এবং ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে( ১ম-১২তমদের) আবেদন করতে দেয়া হয়নি।

৫। NTRCA’র সদ্য সাবেক বিদায়ী চেয়ারম্যান জনাব এনামুল কাদের খাঁন মহোদয়ের তথ্য মতে ৬০ হাজার জাল সনদ নিয়ে চাকরি করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে,যাহা ২০২২ সালে তৎকালীন এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান স্যার স্বীকারও করেছেন এবং ২০২২ সালে জাতীয় পত্রিকায় চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । অথচ আমরা বৈধ সনদধারী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।এটা সচেতন বিবেকবান মানুষ হিসেবে সত্যিই লজ্জাজনক ।

৬।সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চের রায় আমাদের পক্ষে দিয়েছে,, শুধু হয়রানি করার উদ্দেশ্য নিয়ে NTRCA ৫৪/২০২২ নং রিভিউ মামলা করেছিল, এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট । কারণ আইনী সকল লড়াইয়ে এনটিআরসিএ পরাজিত হয়ে একটা অশুভ চক্রান্ত করে আমাদের আইনগত অধিকার হরণের অপচেষ্টা করেই চলেছে।

৭। ১ম–৫ম তম পর্যন্ত ব্যাচের ৪৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে ৪র্থ গণবিঞ্জপ্তিতে, এদের সকলকে নিয়োগ দিয়েছে আইনের যথাযথ প্রতিপালনের মাধ্যমে । ফলে অন্যদের আবেদনের সুযোগ না দেওয়া ও নিয়োগ বঞ্চিত করা নিসন্দেহে গর্হিত অন্যায় ।

৮। ২১-১২-২০২২ইং তারিখ তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় আশ্বাস দিয়ে বললেন, ৪র্থ গণবিঞ্জপ্তি NTRCA  দিবে না,অথচ ঐ দিনই কিছুক্ষণ পরে বিঞ্জপ্তি দেওয়া হলো। তাহলে কি আমরা ধরেই নিব মন্ত্রী মহোদয়রা ব্ল্যাক মেইলের স্বীকার হলেও সচিবদের নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা একেবারেই ছিল না বললেই চলে ।

৯। ২-১-২০২৩ ইংরেজি খ্রীস্টাব্দে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপুমনি মহোদয় আমাদের সাথে আলোচনার একপর্যায়ে বললেন, যেহেতু উচ্চ আদালতে মামলা চলমান, ফলে বিদ্যমান আইনের বাইরে কিছুই করতে পারিনা। তাহলে মামলা চলমান অবস্থায় ৪র্থ গণ-বিঞ্জপ্তি দেওয়া হলো, এই দুরভিসন্ধিমূলক কাজ এনটিআরসিএ’র করার পেছনে শক্তির উৎস কোত্থেকে, কিভাবে পেল।

১০| গত ৫–২–২০২৩ তারিখ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চের রিভিউ ৫৪/২০২২ নং মামলার আদেশে বলেন, মামলা বিলম্বিত করে দায়ের করায় NTRCA এর আপিল খারিজ করেছেন। তাহলে পরে সহজেই অনুমিত হলো অযথা হয়রানি ও আইনগত অধিকার বঞ্চিত করাই ছিল NTRCA এর উদ্দেশ্য এবং অবৈধ সনদ বানিজ্য, চাকরি বানিজ্যই তাদের মূল লক্ষ্য । মূল রীট মামলা ১৩৯/২০১৯ নং এর নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে আপিল ৩৯০০/২০১৯ নং মামলা দায়ের করলেন। রিভিউ তে যে অবজারভেশন দেওয়া হয়েছে ১ম-১২তম দের নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে ।

১১| ১ম–১২তম দের সনদের বিপরীতে কোনো বয়সসীমা উল্লেখ ছিল না, এমনকি আমরা যখন পাস করেছিলাম, তখন আমাদের প্রত্যেকেরই বয়স ৩০ বছরের নীচে ছিল । সময়মতো নিয়োগ দিতে না পারার এই দায়ও কি আমাদের? নিশ্চয়ই নয় বরং দায়িত্ব অবহেলার দ্বায়ে অবশ্য অবশ্যই এনটিআরসিএ কে নিতে হবে ।

১২| ১৩তমদের সাথে আমাদের মেরিট লিষ্ট করে প্রকারন্তরে ১ম–১২তমদের চাকরি বঞ্চিত করে রাখাই ছিল মূল উদ্দেশ্য । অথচ ১ম–১২তমদের পৃথকভাবে নিয়োগের একটা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ দিয়েছিল। সেই সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ অমান্য করার এখতিয়ার এনটিআরসিএ’র কোনো অবস্থায় নেই ।

১৩| এনটিআরসিএর তথ্য মতে ৬০ হাজার জন জাল সনদধারী কে প্রতি সনদের বিপরীতে ২ লক্ষ টাকা, জনপ্রতি চাকরি দিতে ৬ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন বলে যে জনশ্রুতি আছে,যদি সেই জনশ্রুতি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে পরে সেই জনশ্রুতি অনুযায়ী এনটিআরসিএ ৪৮ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ।যার কতিপয় উদাহরণ ড্রাইভার জিয়ার দূর্নীতি ও সিস্টেম এনালিস্ট রাসেল এর কানাডা গমন কোটিপতি বনে যাওয়ার মধ্যে স্পষ্ট বলে আমরা বিশ্বাস করি ।
এহেন গর্হিত অন্যায় অপরাধের ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে, আমরা আমাদের আইনগত নিয়োগের নিশ্চয়তা পেতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার এর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি ।

১৪| একটি সহজ বিষয়কে জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে এনটিআরসিএ । কারণ ১ম-১২তম দের নিয়োগের যে নির্দেশনা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, সেই নির্দেশনা মেনে কাজ করলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই অন্ধকুপের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেত।
১৫| NTRCA প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি থেকে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত যতগুলো পদ শূন্য হয়েছিল, তার মধ্যে যতগুলো পদে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সেই পদগুলো বাদে, বাকী সকল সমসংখ্যক পদে ১ম-১২তম নিবন্ধন সনদধারী কে নিয়োগ দিতে হবে ।

১৬|১ম-১২তম সনদধারী সকলের চাকরি সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সকল নিবন্ধন পরীক্ষা ও গণবিঞ্জপ্তি বন্ধ রাখতে হবে ।

১৭|আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও বলা হয়েছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে চাকরি দিবেন । অথচ আমরা এনটিআরসিএ’র যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত ।

১৮|এনটিআরসিএ’র সচিব ওবায়দুর রহমান স্যার প্রায়শই বলে থাকেন ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে নিয়োগ সুপারিশ এর দায়িত্ব যখন এনটিআরসিএ পেয়েছিল তখনই কেনো উনারা ১ম-১২তম দের ক্ষেত্রে বলতে পারলেন না, এদের নিয়োগ আমরা দিতে পারবো না । অথবা যে পদগুলো ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্য রয়েছে ঠিক ততোগুলো পদে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে। এমনকি উনারা তখন ১ম থেকে সকল ব্যাচকে নিয়ে জাতীয় মেধাতালিকা তৈরি করে জাতীয় মেধাশূন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠলেন ।

১৯| এবার আসি এন্ট্রি লেভেল এর কথায়, কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের মানদণ্ড বিচারের সময় একটা নিদিষ্ট তারিখ পর্যন্ত বয়সের উল্লেখ থাকে, আমরা তো যখন পরীক্ষায় পাস করেছি তখন কারোরই বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়নি ।
শুধু তা-ই নয় ড্রাইভার জিয়া ও সিস্টেম এনালিস্ট রাসেল এর চরম দূর্নীতির কথা যখন বলা হলো মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপুমনি মহোদয় কে,তখন আমরা ভেবেছিলাম তাদের শাস্তির ব্যবস্থা নিবেন, কিন্তু না সে আশায় গুড়ে বালি। শিক্ষা মন্ত্রী বরং উল্টো বললেন এমন অভিযোগ নাকি মন্ত্রী মহোদয়ের বিরুদ্ধেও করা হয়েছে, যেই সাংবাদিক প্রতিবেদন লিখেছেন উনাকে ডেকে ধমক দেওয়ায়, পরে সাংবাদিক মাফ চেয়ে চলে গেছেন । অর্থাৎ বিচারের পরিবর্তে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দূর্নীতিগ্রস্হ ড্রাইভার জিয়া ও সিস্টেম এনালিস্ট রাসেল এর পক্ষাবলম্বন করে সাফাই গাইতে গাইতে রীতিমতো শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপুমনি একাগ্রচিত্তে উকালতিই শুরু করলেন। এমনকি সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল তো আমাদের পাত্তাই দিতে চাননি ,উনার পিএস দের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও এতটুকু আলোচনা করার সুযোগ দিতেই নারাজ। তাহলে আমরা যাবো কোথায় । কে দিবে আমাদের আইনগত অধিকার ফিরিয়ে ।

তাছাড়া শত চেষ্টা করেও নির্বাসিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সাক্ষাৎ আমাদের জন্য দূর্লভ হয়ে গিয়েছিল। একাধিকবার মহামান্য রাষ্ট্রপতি,স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি দের দারস্থ হয়ে আমরা সত্যি বিস্মিত ও হতচকিত হয়ে গেছি।কারণ আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যতটুকু শিখেছি তাতে আমার জানামতে চেষ্টায় কোনো ত্রুটির লেশমাত্র নেই। সরকারের দায়িত্বশীল কোনো মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এমনকি মহামান্য রাষ্ট্রপতিও একজন সাধারণ নাগরিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাক্ষাৎ এর সুযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমার সোনার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এর নিরাপত্তার চেয়েও অধিক ছিল বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ আমরা অন্তত ৪৫টি দরখাস্ত ডাকযোগে পাঠিয়েছি, যাতে করে বুঝতে পারি সত্যিই কি উনারা দরখাস্ত গুলো পেয়েছেন কিনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো উত্তরও পাইনি এমনকি সাক্ষাৎ করারও কোনো সুযোগ পাইনি ।এমনকি বিগত ২০২২ সালের ৫ই জুন থেকে ২১শে ডিসেম্বর ২০২২ ইংরেজি তারিখ পর্যন্ত ২০০ দিন প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষকরা সকাল সন্ধ্যা গণ-অনশন করে যখন হয়রান হয়ে গেছে ততক্ষণে আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার কোনো অবস্থায় প্যানেল করে নিয়োগ দিবে না। তাই তো আবারও নিয়োগ প্রত্যাশী (১ম-১২তম) শিক্ষক পরিষদ এর ব্যানারে নতুন উদ্যমে আন্দোলনের ভিন্ন মাত্রা নিয়ে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করলাম । কিন্তু আমলারা ক্ষণে ক্ষণে ভোল পাল্টে যায়। শত কথার একটি কথা নিয়োগ দেওয়া যায়না। বর্তমান এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান বলেন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু করণীয় নেই। এমনকি সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রীথমে বুঝতে চাইলেও পরে এক অজানা রহস্যের বেড়াজালে তিনিও বয়সের অযুহাত দেখিয়ে শেখ হাসিনার মন রক্ষা করে নিবন্ধন সনদ ধারী দের নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে বেঁকে বসলেন। তাছাড়া আমরা গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ইংরেজি তারিখ থেকে এই পর্যন্ত ১০ বার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় কে বুঝাতে পেরেছি, প্রথমে বুঝতে পারলেও পরে মন্ত্রী মহোদয়ও সচিবদের আদলেই কথা বলেছেন । আসল কথা হলো রক্ষক যখন ভক্ষকের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে , তখনই অধিকার আদায়ের শপথ গ্রহনকারী নিবন্ধন সনদ ধারীদের অধিকার, বালির বাঁধে রূপান্তরিত হয়ে দিব্যি সলিল সমাধি ঘটেছে। এখন তাহলে আমরা যাবো কোথায়, নাকি অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে, কবে নাগাদ সেনা প্রধান জে. আজিজ ও আইজিপি বেনজিরের মতো যখন পদস্খলন কিংবা অবসরে যাবে আমলারা তখন যদি কোনো স্বহ্নদয় ব্যক্তি আমলাদের দূর্নীতি প্রকাশ করে, তখনই আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে, অন্যথায় নয়। ততক্ষণে বড্ড দেরিই হয়ে যাবে ।
আর নয় কোনো অপেক্ষা,
বড্ড লেগেছে তিতিক্ষা।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচিত করে ধনী এবং গরীবের সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল বৈষম্য দূরীকরণের ব্যাপারে আপোষহীন দূর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার যে সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে যথাযথ মর্যাদায় সুপ্রসন্ন করা এখন সময়ের দাবীতে পরিগনিত করার মোক্ষম উল্লেখযোগ্য বিষয়ে গণমানুষের কাছে অভিহিত করেছেন এ দেশের আপামর ছাত্র জনতা, তাদের সকল আত্মত্যাগ আমাদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করতে সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি ।
এই স্লোগান কে সামনে রেখে অধিকার আদায়ের শপথ নিতে আমরা নিন্মলিখিত ২ দফা দাবি জনসমক্ষে উপস্থাপন করছি :

১| কোনো আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নয় বরং আইনের প্রতিপালনের মাধ্যমে বৈধ সনদধারী ১ম-১২তম দের নিয়োগ সুনিশ্চিত করতে হবে ।

২| নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সকল অবৈধ সনদ ধারী নিয়োগ পেয়েছে , ঐ সকল দূর্নীতিপরায়ন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ও অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিচার বিভাগীয় সুষ্ঠু তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে বিচার করে উপযুক্ত ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে ।মোদ্দা কথা হলো যদি নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকতো তাহলে ২০২২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সরোজ কুমার নাথ স্যার ২১৭৯৬ জনের নামের তালিকা গ্রহণ করতেন না।কাজেই সন্দেহাতীত ভাবেই প্রমাণিত, উপরোক্ত অনিয়ম ও দূর্নীতি এবং ২ দফা দাবী পর্যালোচনা করলে সহজেই অনুমিত হয় যে, কেবল সদিচ্ছাই হতে পারে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ/ যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দানের শ্রেষ্ঠ উপায়।