মধ্য আফ্রিকার দেশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলের প্রধান শহর গোমায় বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষে পাঁচ দিনেই অন্তত ৭০০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
রুয়ান্ডা সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীরা নর্থ কিভু প্রদেশের রাজধানীটি দখল করার সময় প্রায় ২,৮০০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক। বিদ্রোহীরা এখন দক্ষিণে সাউথ কিভুর রাজধানী বুকাভুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দেশটির পূর্বাঞ্চলে সংঘাত-সংঘর্ষ ১৯৯০-এর দশক থেকে চললেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।তুতসি সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে গঠিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী বলছে, তারা সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে। তবে কঙ্গোর সরকার দাবি করছে, রুয়ান্ডা সমর্থিত এই বিদ্রোহীরা আসলে খনিজসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চল দখল করতে চায়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংঘর্ষে অন্তত ৭০০ জন নিহত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কঙ্গো সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র দুজারিক সতর্ক করেছেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এম২৩ বিদ্রোহীদের অগ্রগতি থামাতে কঙ্গোর সামরিক বাহিনী গোমা ও বুকাভুর মাঝামাঝি অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সভিত্তিক একটি সংবাদ সংস্থা।
বুকাভুর প্রতিরক্ষার জন্য শত শত বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাউথ কিভুর গভর্নর জান-জাক পুরুসি সাদিকি জানিয়েছেন, সরকারি বাহিনী ও তাদের মিত্ররা বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করছে। তবে রয়টার্স এই দাবির স্বতন্ত্র যাচাই করতে পারেনি।
এর আগে এম২৩ ঘোষণা দিয়েছিল, তারা রাজধানী কিনসাসা পর্যন্ত অভিযান চালাবে। কিনসাসা গোমা থেকে প্রায় ২,৬০০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
এদিকে, কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেরেজ কায়িকোয়াম্বা জাতিসংঘকে জানিয়েছেন, রুয়ান্ডা অবৈধভাবে কঙ্গো দখলের চেষ্টা করছে এবং সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়ী করে বলেছেন, “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামেকে জবাবদিহিতার আওতায় না এনে তাকে যা খুশি তা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”
তবে রুয়ান্ডার মুখপাত্র ইয়োলান্ড মাগোদো এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “আমরা যুদ্ধে আগ্রহী নই, সীমানা বাড়ানোর ইচ্ছাও নেই। কঙ্গোর সরকার ফেলে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনাও আমাদের নেই।”
জাতিসংঘের বিশ্লেষকদের অনুমান, কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে এম২৩ বিদ্রোহীদের পাশাপাশি রুয়ান্ডার তিন থেকে চার হাজার সৈন্য সক্রিয় রয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার জিম্বাবুয়েতে এক জরুরি বৈঠকে আঞ্চলিক জোট সাউথ আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি) কঙ্গোর সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এসএডিসি শান্তিরক্ষী দল কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফেরানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল, যেখানে বেশিরভাগ সৈন্যই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার।
গোমার আশপাশে সংঘর্ষে গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার ১৬ সেনা নিহত হয়েছেন।