প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের আলোচিত গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেছেন, তবে এ সফরে ভুক্তভোগীদের অনেকেই আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরায় অবস্থিত তিনটি বন্দিশালা ঘুরে দেখেন তিনি। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় এসব বন্দিশালা ব্যবহৃত হতো বলে দাবি করেছেন উপদেষ্টা ইউনূস। বিশেষত, র্যাব ও ডিজিএফআই কার্যালয়ের নিকটস্থ এসব স্থানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো বলে জানিয়েছেন তিনি।
পরিদর্শন শেষে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “এটা একটা বীভৎস দৃশ্য! নিরপরাধ মানুষদের ধরে এনে এসব টর্চার সেলে নির্যাতন করা হতো।”
এ সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা, যাদের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রয়েছেন। তারা নিজেরা অতীতে এসব বন্দিশালায় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
তবে ভুক্তভোগীদের একটি বিশাল অংশ, বিশেষত গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এই পরিদর্শনে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সংগঠনটির সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, “সরকার আমাদের কিছুই জানায়নি, এটা খুবই দুঃখজনক।”
অন্যান্য ভুক্তভোগীরাও একই রকম হতাশা প্রকাশ করেছেন। পাঁচ বছরের বেশি সময় ‘আয়নাঘরে’ আটক থাকা ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা বলেন, “আমি নিজে উপস্থিত থাকতে পারলে গুম কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ দিতে পারতাম। কিন্তু আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।”
পরিদর্শন শেষে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “গত সরকার দেশে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’র যুগ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই বন্দিশালা তারই একটি নমুনা।”
সরকারি হিসেবে ঢাকার বাইরেও বেশ কয়েকটি গোপন বন্দিশালার অস্তিত্ব রয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও জানান, “দেশজুড়ে বিভিন্ন সংস্করণে এসব নির্যাতন কেন্দ্র ছড়িয়ে আছে, অনেক জায়গায় আলামত নষ্ট করা হয়েছে।”
গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে গুমের ঘটনা ঘটেছে এবং এতে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, এনটিএমসি’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং পুলিশের মো. মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গুমের ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পাশাপাশি র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে কমিশন। আগামী মার্চ মাসে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।