সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কিছু ভুল ছিল। সে সময় মার্কিন সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সমর্থন নিয়ে সেই ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে।
শনিবার (৮ মার্চ) সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক বিশেষ সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
‘মাইলাম ও জন-এর সঙ্গে সংলাপ’ শীর্ষক এ আয়োজনে বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের বর্তমান গতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ও সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আয়োজনে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও মার্কিন অবস্থান
রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দীর্ঘস্থায়ী। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, আমরা একটি ছোট সংগঠন গঠন করেছি, যার মাধ্যমে মার্কিন জনগণকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কাজ করছি। গত পাঁচ বছরে আমরা অর্থায়নের ব্যবস্থা করেছি এবং এ উদ্যোগকে সমর্থন করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি যে তথ্য আমার সরকারের কাছে পৌঁছে দিতাম, তা সঠিকভাবে সংগ্রহ করাটাই ছিল কঠিনতম কাজ। সেই সময় সরকার আমাকে তাদের পক্ষ নেওয়ার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করেছিল।
গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা নিয়ে ড্যানিলোভিচের বক্তব্য
জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, বাংলাদেশে শাসক দলের জবাবদিহিতার অভাব অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে একটি শক্তিশালী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক অপরিহার্য। স্বৈরাচারী শাসন কখনোই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ‘তথ্য যুদ্ধের’ সম্মুখীন, যেখানে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন সরকার এ ধরনের প্রচারণা মোকাবিলায় কাজ করছে।
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক বলেন, ২০০৭-০৮ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কিছু ভুল ছিল, যা নিয়ে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। সে সময় মার্কিন সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি।
তিনি বলেন, নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে এবং গত ১৭ বছরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করে সুশাসন সংস্কারের জন্য ব্যবহার করা উচিত।
ড্যানিলোভিচ বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক আলোচনাকে শক্তিশালী করতে নাগরিক সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে দেশে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক রূপান্তর পরিচালনায় এ ধরনের সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে সমর্থন এবং টেকসই ও জবাবদিহিতামূলক শাসন কাঠামো নিশ্চিত করতে ধারাবাহিক সংলাপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ও সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ।