পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়া একটি ট্রেনের যাত্রীদের মধ্য থেকে ৮০ জনকে উদ্ধার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। খবর জিও টিভির।
খবরে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। সেখানে অজ্ঞাত সংখ্যক বিচ্ছিন্নতাবাদী জাফর এক্সপ্রেসের যাত্রীদের জিম্মি করেছিল।
নিরাপত্তা সূত্র জানায়, অভিযানে অন্তত ১৩ হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৮০ জন সাধারণ নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে।
নয় বগির ট্রেনটি চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার পেশওয়ারের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। পরে ওই ট্রেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার শিকার হয়।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫৩ জন পুরুষ, ২৬ জন নারী এবং ১১ জন শিশু রয়েছে। নিরাপত্তা সূত্র জানায়, তাদের বাহিনী এখনও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে যাতে বাকি জিম্মিদের উদ্ধার করা যায়। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আরও কাছ থেকে ঘিরে ফেলা হচ্ছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে যায়। আহত যাত্রীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য কাছের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) হামলার দায় স্বীকার করে এক বিবৃতিতে বলছিল, ছয় সামরিক সদস্য নিহত হয়েছেন।
গোষ্ঠীটি আরও বলছিল, জিম্মিদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। যদি নিরাপত্তা বাহিনী কোনো অভিযান চালায়, তবে প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএলএ।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা শুরুর পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী ট্রেনটি ঘিরে ফেলে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়।
নিরাপত্তা সূত্র জানায়, হামলার পেছনে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আফগানিস্তানে থাকা তাদের মূল পরিকল্পনাকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং নারী ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অভিযান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তা সূত্র জানায়, ঘটনাস্থলটি দুর্গম এলাকায়। এ কারণে অভিযান আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, হামলাকারীরা ট্রেনে ওঠার আগে রেলপথে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ইঞ্জিন লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে চালককে আহত করে। ট্রেনে অবস্থানরত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।
একপর্যায়ে ট্রেনটি একটি টানেলের ঠিক আগে থেমে যায় এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আফগানিস্তান ও ইরান সীমান্তবর্তী প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
কোয়েটার জ্যেষ্ঠ রেলওয়ে কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাশিফ এএফপিকে জানিয়েছিলেন, সাড়ে চার শতাধিক যাত্রী বন্দুকধারীদের হাতে জিম্মি রয়েছেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (পিআইসিএসএস) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেড়ে যায়।
উপাত্ত অনুযায়ী, জানুয়ারিতে দেশটিতে অন্তত ৭৪টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়, যেখানে ৯১ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৩৫ জন নিরাপত্তাকর্মী, ২০ জন বেসামরিক নাগরিক ও ৩৬ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী।
এ ছাড়া ৫৩ জন নিরাপত্তাকর্মী, ৫৪ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১০ জন বিচ্ছিন্নতাবাদীসহ মোট ১১৭ জন আহত হন।
বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কার্যক্রম বেড়েছে। পাকিস্তানের এই প্রদেশে অন্তত ২৪টি হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ১১ জনই নিরাপত্তা কর্মী, ছয়জন বেসামরিক নাগরিক এবং নয়জন বিচ্ছিন্নতাবাদী।