নিজস্ব প্রতিবেদক:
চিকিৎসা পেশায় ও সমাজ কল্যানে অনবদ্য অবদান রাখায় বাংলাদেশি চিকিৎসক ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (আইসিআরসি) এর প্রতিষ্ঠাতা।
বিশিষ্ট ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম-কে Royal college of UK FRCOG
সম্মাননা প্রদান করেছেন। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) এই বাংলাদেশি জীবন্ত কিংবদন্তীর হাতে রয়্যাল কলেজ অফ ইউকে’র পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।
অধ্যাপক ডা. রাশিদা বেগম একজন স্বনামধন্য প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ এবং ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় বাংলাদেশের অন্যতম পথিকৃৎ এবং ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (আইসিআরসি) এর প্রতিষ্ঠাতা।
ডা. রাশিদা বেগম ১৯৫৮ সালে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার বাসবুনিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক,
১৯৭৫ সালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি, ১৯৮২ সালে শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক এবং ১৯৯৪ সালে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগে ফেলোশিপ সম্পন্ন করেন।
তিনি ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল শিক্ষায় ডিপ্লোমা এবং ১৯৯৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
২০০৬ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ লিডস থেকে ক্লিনিক্যাল ভ্রূণবিদ্যায় এমএসসি সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভ করেন।
ডা. রাশিদা বেগম স্নাতক সম্পন্ন করে প্রথমে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে পরবর্তীতে ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চাকরি করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগে চাকরি করার সময় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এ উত্তীর্ণ হন।
তিনি ফেলোশিপ ট্রেইনিং শেষ করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন।
ডা. রাশিদা বেগম ২০০২ সালে ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (আইসিআরসি) প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি দক্ষতার সাথে বন্ধ্যাত্ব এর চিকিৎসা নিয়ে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে এসিস্ট্যান্ট রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি (এআরটি) নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন।
এখানে হাজারের অধিক দম্পতির সফলতার সাথে তিনি চিকিৎসা করেছেন।
ডা. রাশিদা বেগম গবেষক হিসেবেও কাজ করছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৮২ টির মত জার্নাল প্রকাশ করেছেন।
বিভিন্ন বই এ লেখার পাশাপাশি তিনি ২০১৯ সালে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগে রোগীর ব্যবস্থাপনা সহায়ক একটি বই প্রকাশ করেন।
২০০৫ সালে সেরা গবেষণার জন্য এশিয়া ওসেনিয়া ফেডারেশন অব অবস্টেট্রিক্স এন্ড গাইনোকোলজি (এওএফওজি) থেকে ‘ইয়াং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ লাভ
করা বাংলাদেশের প্রথম স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। একই সালে নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে ‘শাইনিং পার্সোনালিটি অ্যাওয়ার্ড’ পান।
২০০৮ সালে দেশপ্রেমী সাংস্কৃতিক সংঘ ডা. রাশিদা বেগমকে ‘বেস্ট ফার্টিলিটি স্পেশালিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত করেনে।
২০১০ সালে তিনি ‘হেলেন কেলার’ গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। ইনফার্টিলিটি চিকিৎসায় অবদানের জন্য ২০১৬ সালে অবস্টেট্রিক্স এন্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি (ওজিএসবি) এই গুণী চিকিৎসককে আজীবন সম্মাননা প্রদান করে।
তিনি ২০১৭ সালে একইসাথে সুইজারল্যান্ডের ইউরোপিয়ান বিজনেস এন্ড মেডিকেল এসোসিয়েশন প্রদত্ত ‘রোজ অফ প্যারাসেলসাস অ্যাওয়ার্ড’ এবং সাহেরা হাসান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এর পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ রয়েল কলেজ অফ অবস্টেট্রিসিয়ান এন্ড গাইনোকোলজিস্ট ২০২১ সালে ডা. রাশিদা বেগমকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।
গুনি এই চিকিৎসকের হাত ধরে বাংলাদেশে বন্ধ্যাত্ব দুরীকরনে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।