জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ‘বিদ্বেষ’ থেকে দুই ভাগ করা হলে তা দেশের জন্য ‘ভয়ংকর’ পরিস্থিতি তৈরি করবে—এমন সতর্কবার্তা আসার ঠিক পরদিনই সংস্থাটির সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে সরকার। রোববার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই কমিটি বিলুপ্তির কথা জানানো হয়। যদিও কমিটির সদস্যরা বলছেন, এনবিআর পৃথকীকরণে জারি করা অধ্যাদেশে তাদের সুপারিশের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি। রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে গত বছরের অক্টোবরে এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
এর আগে শনিবার, ঢাকার গুলশানে এক গোলটেবিল আলোচনায় কমিটির সদস্য এবং এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন এই আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, “বিদ্বেষ থেকে বা ভুল করে যদি এনবিআরকে দুই ভাগ করা হয়, তাহলে তা জাতির জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।” তিনি আরও বলেন, রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করার সুপারিশ কমিটি করেছিল ঠিকই, কিন্তু সরকার যেভাবে অধ্যাদেশ জারি করেছে, তা তাদের সুপারিশ অনুযায়ী হয়নি। ফরিদ উদ্দিন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, “সমন্বয় ঠিকমতো না হলে এখনকার চেয়েও পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।”
কমিটি বিলুপ্তির কারণ হিসেবে সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি হওয়ায় কমিটির কার্যক্রম সমাপ্ত করা হলো।
তবে গত বছরের অক্টোবরে গঠিত এই কমিটির মূল কাজ শুধু এনবিআর পৃথক করা ছিল না, বরং রাজস্ব নীতি ও প্রশাসন সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোসহ বিস্তৃত পরিসরে পরামর্শ দেওয়ার কথা ছিল।
গত ১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ তৈরির অধ্যাদেশ জারি করা হলে সংস্থাটির কর্মীরা আন্দোলনে নামেন। তাদের মূল দাবি ছিল, শীর্ষ পদে প্রশাসন ক্যাডারের পরিবর্তে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। কর্মীদের দাবির মুখে সরকার অধ্যাদেশটি সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
কমিটির সদস্য ও সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। সদিচ্ছা না থাকলে শুধু রিপোর্ট বা অধ্যাদেশ জারি করে লাভ হবে না। এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, হঠাৎ করে এনবিআরকে যেভাবে আলাদা করা হচ্ছে, তাতে আমরা বিভ্রান্ত। আমরা আসলেই এ ধরনের সংস্কার চেয়েছিলাম কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, সংস্কার কমিটি একটি ভালো উদ্যোগ ছিল। কিন্তু তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের মধ্যে আগ্রহের অভাব দেখা যাচ্ছে। এই পৃথকীকরণ কার্যকর না হলে উভয় বিভাগেই সমস্যা তৈরি হবে।