বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স; যেটি কাতারের দোহায় বিরতির পর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লন্ডনে পৌঁছানোর কথা।
সাত বছর পর হিথ্রো বিমানবন্দরে মা-ছেলের দেখা হওয়ার কথা রয়েছে; বুধবার সকালে সেখানে তারেক রহমান মাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন বলে বিএনপির তরফে জানানো হয়েছে।
সব জল্পনার অবসান শেষে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি টারম্যাক থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী উড়োজাহাজটি রানওয়ের দিকে এগোতে থাকে; এর কিছুক্ষণ পরই উড়াল দেয় এটি।
খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, ম্যাডামকে নিয়ে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা শুরু করেছে। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ম্যাডামের জন্য দোয়া চাই।”
এর আগে রাত পৌনে ১১টার দিকে ৮ নম্বর গেইট দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশ করে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি ১১টা ১০ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন।
বিমানবন্দরে আসার পথে সড়কজুড়ে নেতাকর্মীদের বিদায়ী শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে তার গাড়িবহর বিমানবন্দরের দিকে যত এগিয়েছে, নেতাকর্মীদের ঢল ততই বেড়েছে। দলের আহ্বান এড়িয়ে তারা একযোগে নেমে আসেন সড়কে, এতে যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে তার গাড়ি ধীর গতিতে চলতে থাকে। গুলশান থেকে বিমানবন্দরের পথটুকু যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। এতে রাত ১০টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ছেড়ে যাওয়ার সূচি পিছিয়ে যায়।
বাসা থেকে বের হওয়ার আগে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা, প্রয়াত ভাই সাঈদ ইস্কান্দারের সহধর্মিনী নাসরিন ইস্কান্দারসহ আত্মীয়-স্বজনরা তাকে বিদায় জানান।
পরে রাত ৮টা ১৬ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বাসা থেকে রওনা হয়ে গুলশান অ্যাভিনিউ, গুলশান-২, বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, কাকলী হয়ে বিমানবন্দর সড়কে ওঠে। তাদের মুহুর্মুহু স্লোগানের মধ্যে গাড়িবহর এগিয়ে চলে। বাকি পথ যেতে লাগে আধা ঘণ্টার মতো।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ উড়োজাহাজে তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজকীয় বহরের এই বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলেন কাতারের আমির, যা সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। তার গাড়ি সরাসরি ৮ নম্বর গেট দিয়ে ভিআইপি টারমার্কে পৌঁছায়। সেখানে তারা অ্যাম্বুলেন্সের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে বিদায় জানান।
বুধবার লন্ডনে পৌঁছাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, “ঢাকা থেকে প্রথমে দোহায় যাবে অ্যাম্বুলেন্সটি। সেখানে যাত্রাবিরতি শেষে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।”
হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়াকে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডন ক্লিনিক নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ক্লিনিকে তাকে ভর্তি করা হবে।
বিমানবন্দরে থাকবেন তারেক রহমান
জাহিদ আরও বলেন, “সাত বছর পর মাকে স্বাগত জানাতে হিথ্রো বিমানবন্দরে তারেক রহমান, তার সহধর্মিণী জোবাইদা রহমান, তার মেয়ে জাইমা রহমান, লন্ডন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন উপস্থিত থাকবেন।”
প্রাথমিক পরিকল্পনায় খালেদা জিয়ার লন্ডন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন যুক্তরাজ্যেই চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রস্তুতি
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা আরও বাড়ে।
তবে চলতি সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিএনপির নেতারা দাবি করেন যে, সরকারের অটল অবস্থানের কারণে তিনি দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে পারেননি। তবে, বিএনপি নেতাদের মতে, সরকার পতনের পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গী
লন্ডনের পথে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিশেষ উড়োজাহাজে তার পুত্রবধূ ছোট ছেলে আরফাত রহমানের স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি, চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক্সসহ বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন সদস্যও থাকবেন।
এছাড়া তার সঙ্গে থাকবেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।