দুর্গাপূজা ও টানা চার দিনের সরকারি ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভিড় জমেছে ভ্রমণপিপাসু ও বিনোদনপ্রেমী মানুষের। এই সুযোগে অনেকেই পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছুটি কাটাতে কক্সবাজারে আসছেন।
কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের মধ্যে ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর সময়ের জন্য ৯০ শতাংশের বেশি রুম বুকিং হয়ে গেছে। ১৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং হয়েছে ৮০ শতাংশেরও বেশি। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রায় সব হোটেল ৪০-৪৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। হোটেল মালিকরা আশা করছেন, রোববারের (১৩ অক্টোবর) মধ্যে শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে যাবে।
শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে। পরিবার নিয়ে দল বেঁধে অনেকে ঘুরছেন, আবার কেউ সাগরের নোনা পানিতে গোসল করছেন।
ঢাকার মালিবাগ থেকে আসা শাহ জালাল ও তার স্ত্রী শারফিন বলেন, “কক্সবাজারে অনেকবার এলেও এবার প্রথমবার জীবনসঙ্গীনিকে নিয়ে আসলাম। হোটেলে রুম পেতে বেশ কষ্ট হয়েছে। সৈকতে মানুষের ভিড় দেখে মনে হচ্ছে, এটা বড় কোনো সমাবেশস্থল।”
কুমিল্লা থেকে আসা ফাহিম সরকার বলেন, “রুম না পাওয়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসতে পারিনি। মাত্র দুটি রুম পেলাম, তাই আমরা দুই ভাইয়ের পরিবার এসেছি। মা-বাবা ও ভাই-বোনরা থাকলে আরও ভালো লাগতো।”
কক্সবাজার শহর ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেকসহ আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় করছেন হাজার হাজার মানুষ। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ৪ মাসের মধ্যে এই সপ্তাহেই সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন।
হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এ বছর কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক আসবে।”
এদিকে, দুর্গাপূজার ছুটিতে পর্যটকদের সুবিধার্থে কক্সবাজার-ঢাকা রুটে ৭টি বিশেষ ট্রেন চালু হয়েছে। ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চার দিন এসব ট্রেন চলবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বিশেষ ট্রেনে আসন সংখ্যা ৫১৮টি এবং কক্সবাজার থেকে ঢাকামুখী ট্রেনে আসন সংখ্যা ৬৩৪টি।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার কামাল জানান, “রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দীর্ঘ দুই মাস কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে মন্দা চললেও এখন পর্যটকের ভিড়ে আবারও সরব হয়ে উঠেছে কক্সবাজার।”
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, “ড্রোন ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সৈকতসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সাদা পোশাকে ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”
পর্যটকরা কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ, শামলাপুর, মহেশখালী ও ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট ভ্রমণ করছেন।