মেহেদী হাসান, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মোঃ মাইনুল ইসলাম পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের অনাবাদিত নিচু পতিত জমিতে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির বাগান ও মাছ চাষের খামার।
তিন বছর পূর্বে ২৫ শতাংশ পতিত জমিতে ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে মাদা তৈরি করে প্রাথমিক ভাবে শুরু করে সবজি চাষ। পরবর্তীতে কৃষি দফতরের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তুলেছেন বড় আকারের বিষ মুক্ত পুষ্ঠি বাগান ও মাছের খামার। নিজের তৈরি ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে
তার বাগানে উচ্চ ফলনশীল বাবু জাতের পেঁপে, বারি-১২ বেগুন, লাল জাতের নিজের উদ্ভাবিত তাল বেগুন, সাদা বেগুন, দেশী জাতের সুগন্ধি ঘৃত কুমারী বোব্বাই মরিচ, মেঘা জাতের টমেটো, সীম, ময়না ও নবাব লাউ, বারমাসি কাজী পেয়ারা, কাগজী লেবুতে ভরপুর। অপরদিকে বাগানের মাঝখানে মাছ চাষের জন্য তৈরি করেছেন পুকুর। বর্তমানে পুকুরে রুই, কাতল, তেলাপিয়া, কার্প জাতীয় মাছ চাষ করেছেন।
সবজি বাগানে প্রাকৃতিক ভাবে ফাঁদ পেতে কীট পতঙ্গ নিধন করে।
মাইনুল ইসলাম বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমি পড়াশুনার ফাঁকে বাবার কৃষি কাজে সাহায্য করতাম, তিন বছর আগে নিজ উদ্যোগে বাবার ২৫ শতাংশ পতিত জমিতে প্রথম সবজি বাগানের কাজ শুরু করি। পরে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শামীম খানের পরামর্শে বিভিন্ন সময় কৃষি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে পর্যায়ক্রমে গড়ে তুলেছি। নিজে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো) সার তৈরি করে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে বাগানে প্রয়োগ করি এবং প্রাকৃতিক ভাবে বালাই নাশক তৈরি করে ও ফাঁদ পেতে কীট পতঙ্গ নিধন করে বিষমুক্ত সাক-সবজি চাষ করি। আমি গত সিজনে শুধু ৩৫ টি পেঁপে গাছ থেকে দু’ লক্ষ টাকা বিক্রি করেছি। একটি বারি-১২ ও তাল বেগুনের ওজন এক থেকে দেড় কেজি হয়।
বর্তমানে আমার সকল ব্যয় বাদ দিয়ে বাৎসরিক ২লক্ষাধিক টাকা আয় হচ্ছে। এছাড়াও আমার মাছের খামারে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছি। আমি বর্তমানে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে রাস্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি।
এব্যাপারে একই গ্রামের কৃষক আবুল কালাম মৃধা বলেন, মাইনুলের বাগান থেকে বিভিন্ন জাতের বীজ ও চারা নিয়ে আমি ও অনেকেই সবজি বাগান করে লাভবান হচ্ছি। অপর এক বৃদ্ধ আ: খালেক হাওলাদার বলেন, আমি সহ অনেকেই মাইনুলের বাগান থেকে স্বল্প মূল্যে বিষ মুক্ত সাক-সবজি ক্রয় করি।
মাইনুলের বাবা আ: ছালাম বলেন, মাইনুলের উদ্যোগে বিষ মুক্ত সমন্বিত পুষ্টি বাগান ও মাছ মাছ চাষ করে আজ স্বাবলম্বী। বাগান দেখতে উর্ধ্বতন কৃষি কর্মকর্তা ও বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা আসেন। গত সপ্তাহে জাইকা প্রকল্পের বাংলাদেশ প্রধান মি. ইচিগুচি তমাহেদো পরিদর্শন করেন। আগামীতে আরো ১৫ শতাংশ জমি সবজি চাষের আওতায় আনা হবে।
এব্যাপারে দুমকী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইমরান হোসেন বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শামীম খানের উৎসাহ, পরামর্শ ও তদারকিতে ইতিমধ্যে মাইনুল সমন্বিত সবজি চাষে বিভিন্ন সময় কৃষি অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তায় পরিনত হয়েছে।