BMBF News

বাংলাদেশ-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতায় কৌশলগত চাপে ভারত

আন্তর্জাতিক কূটনীতির শীর্ষ পর্যায়ের পরিবর্তন কখনো কখনো সম্পর্কের অচলাবস্থা ভাঙতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে নতুন গতিশীলতা এনেছে।

গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে গিয়ে নিউইয়র্কে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে অগ্রগতি হিসেবে প্রথম নিয়মিত কার্গো শিপিং রুট চালু হয় এবং সাত বছর পর সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়।

নতুন বছরে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। জানুয়ারিতে পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি যৌথ পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও সম্প্রতি তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষত, বাংলাদেশে পাকিস্তানি বিনিয়োগ বিদ্যমান শিল্প কারখানা আধুনিকায়নে ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি, সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও সম্পর্ক প্রসারিত হয়েছে, যেখানে যৌথ সামরিক মহড়া ও অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে শিক্ষার্থী বিনিময়ের জন্য বৃত্তি কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে এবং ঢাকায় পাকিস্তানি কাওয়ালি শিল্পীর সংগীত পরিবেশনার আয়োজন করা হয়েছে।

তবে ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক জটিল ও সংবেদনশীল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে, যেখানে ভারত গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন দেয়। সেই পটভূমিতে দুই দেশের সম্পর্ক অনেকদিন ধরে সীমিত ছিল।

এদিকে, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়েও আলোচনা চলছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বাংলাদেশকে সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানান, যার প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সার্ক সম্মেলন ঢাকায় আয়োজনের প্রস্তাব দেন।

সার্কের কার্যক্রম এক দশকের বেশি সময় ধরে স্থগিত থাকলেও ইউনূসের এই প্রস্তাব নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সার্কের মূল উদ্দেশ্য ছিল আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, যা বর্তমানে স্থবির অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান গতিপথ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও অর্থনীতিতে নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।