শুরু হলো মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালির সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয় এ মাসে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শোষণ-বঞ্চনার চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনিবার্যতা হিসেবে আসে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার- এই ৩ চাওয়া সুদীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিণত হয় গণদাবিতে। যা আদায়ে অস্ত্রের সামনে বুক পেতে দিতেও দ্বিধা করেনি বীর জাতি। জাতি-ধর্ম-পেশা নির্বিশেষ অংশগ্রহণ আর লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগে বিশ্ব মানচিত্রে আঁকা হয় স্বাধীন দেশের ছবি।
অসাম্যের বিপরীতে সাম্য, অন্যায়ের বিপরীতে ন্যায়ের জয় যে অনিবার্য, মুক্তিযুদ্ধ তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত। তবে স্বাধীনতার এত বছর পরে এসেও এখনও অধরা থেকে গেছে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা। বারবার হোঁচট খেয়েছে দেশ। তাই একাত্তরের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার ও দুর্নীতির মূলোৎপাটনের তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি পরিচয়ই ছিল মুখ্য। কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে খ্রিষ্টান, কে পাহাড়ি এটা বড় বিষয় ছিল না। আর যেকোনো মুক্তিযুদ্ধে কিছু মানুষ থাকে যারা বিরোধিতা করে, তেমন আমাদের ক্ষেত্রেও হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। সুতরাং, এর সার্বজনীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবউল্লাহ’র মতে, আমরা রক্ত দিয়েছি, মুক্তিযোদ্ধারা রক্ত দিয়েছে সবই সত্য। মানুষ অপরিসীম অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড, রক্তপাতের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু মানুষের যে মূল আকাঙ্ক্ষা স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও সেই আকাঙ্ক্ষার বিন্দুমাত্রও বাস্তবায়ন হয়নি।
স্বাধীনতার এত বছর পরও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ অধরা থেকে গেছে উল্লেখ করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, এ কারণে বিভিন্ন সময়ে গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। আমরা বারবার রক্ত দিচ্ছি, দেশের জনগণ রক্ত দিচ্ছে, লড়াই করছে, অভ্যুত্থান ঘটাচ্ছে শুধুমাত্র একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু সেই সমাজ এখনও অধরা। আর এখনও অধরা বলেই বারবার অভ্যুত্থান হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের প্রাণের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্পষ্ট বলা আছে- এই রাষ্ট্রকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এটাই হবে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামসহ সবকিছুই এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হতে হবে।