২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ১৭ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। এর ফলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই রায় তার রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটাতে পারে, আবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এটিকে ‘ফরমায়েশি’ বলে প্রত্যাখ্যান করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সি ইজ ফিনিশড। রাজনীতিতে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। নেতৃত্ব যদি এত বড় বিপর্যয় করে, তার শেষ আছে।” তিনি আরও যোগ করেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই এখন পলাতক বা বিপদে, দলকে পুনর্গঠন করা কঠিন। বিশেষ করে ২০২৪-এর আন্দোলনে প্রাণহানির জন্য ক্ষমা না চাওয়া এবং ষড়যন্ত্রের তত্ত্বে আঁকড়ে থাকা দলের ভাবমূর্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনা যদি সভাপতির পদ ছেড়ে দিতেন, তাহলে দলটি বাঁচতে পারত।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ট্রাইব্যুনালকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ আখ্যা দিয়ে রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারাও রায় মানছেন না। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ফরমায়েশি রায়। নেতাকর্মীরা বিচলিত নন, জনগণও মানবে না।”
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “উনার নেতৃত্ব নিয়ে কারো প্রশ্ন নেই। যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন তার নেতৃত্বেই এগোব। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে এবং শেখ হাসিনাকে ঘিরেই ঘুরে দাঁড়াবে।” ভারতে অবস্থান করেও শেখ হাসিনা দলকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তৃণমূল নেতারা দাবি করেন, দল নিষিদ্ধ থাকলেও গোপনে সক্রিয়, প্রতিটি ওয়ার্ড-ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হচ্ছে।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন। অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিচ্ছে, কিন্তু ভারতের সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা কম। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ বিষয়ে সক্রিয়। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুপস্থিতি এবং দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দীর্ঘমেয়াদে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।
রাজনীতিতে ‘শেষ’ বলে কিছু নেই -এ কথা অনেকে বললেও, এই মৃত্যুদণ্ডের রায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জন্য একটি অভূতপূর্ব সংকট তৈরি করেছে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে আইনি লড়াই, আন্তর্জাতিক চাপ এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ওপর।