মোঃ কামাল হোসেনঃ
মোহাম্মাদ মহিউদ্দিন আব্দুল কাইউম ‘পটুয়াখালী জেলাধীন দুমকি উপজেলার আঠারো গাছিয়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী সিকদার বংশের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহন করেন। পিতা জনাব সেরাজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন সরকারী চাকুরীজীবী।
শিক্ষা জীবন : ১৯৫০ সালে পটুয়াখালী সরকারী জুবিলী হাই স্কুল থেকে মেট্রিক ও ১৯৫২ সালে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। বিএম কলেজ বরিশালে বিএ ভর্তি হলেও রাজনৈতিক কারনে বেশ কয়েকজন ছাত্র নেতাদের বহিস্কার করা হলে তার মধ্যে একজন ছিলেন এই আবদুল কাইউম। এরপর ১৯৫৪ সালে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
মোহাম্মাদ মহিউদ্দিন আব্দুল কাইউম ১৯৫৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের একজন সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন। তখন কিছু সময় তাকে গ্রামে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা কালীন সময়ে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে চাকুরীতে যোগদান করেন। বাকেরগঞ্জের কর্নকাঠি ও গৈলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করে বরিশাল কোর্টে আইনজীবী হিসাবে আইন পেশায় কাজ শুরু করেন।
১৯৭৬-১৯৮২ সাল পর্যন্ত বরিশাল কোর্টে সরকারী আবেদনকারী (জিপি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বরিশালের পাশাপাশি তিনি ঢাকা হাইকোর্টেও প্রাকটিস করেন। ১৯৯৭- ২০০১ সাল পর্যন্ত ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালে সুপ্রিমকোর্টের এ্যাপিলেড ডিভিশনের সিনিয়র আইনজীবী হিসাবে সনদ প্রাপ্ত হন। কথিত আছে তিনি যে মামলায় লড়তেন সে সকল মামলায় বিচারক গনের লেখাপড়া করে কোর্টে উঠতে হতো। তিনি যেভাবে আইনের বইয়ের পৃষ্ঠা উল্লেখ করে সাবমিশন রাখতেন তা অনেকের দ্ধারা সম্ভব ছিলোনা। মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত তিনি এ পেশাতেই ছিলেন। অসংখ্য এ্যাডভোকেটদের কে তিনি হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন।
রাজনৈতিক জীবন: ঢাকা কলেজ এ পড়ার সময় থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত হয়ে ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে সম্পৃক্ত থাকেন। ১৯৫৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীনের বরিশাল আগমন কে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয় যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আব্দুল কাইউম। সে সময়ে পুলিশি নির্যাতনে গুরুতর আহত হন। পুলিশের লাঠিপেটা ও বুটের আঘাতে তার কপাল ফেটে যায়, আমৃত্যু সে দাগ সাক্ষী হয়ে বয়ে বেড়িয়েছে। তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের ভাষায় গনবিরোধী কর্মকান্ডের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ফলে বেশ কয়েক জন ছাত্র নেতাকে বিএম কলেজ থেকে বহিস্কার করা হয় তারমধ্যে অন্যতম আব্দুল কাইউম। স্কুল ছাত্র জীবনে মুকুল ফৌজ, কলেজ জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন পরে কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করতেন। এবং মুক্তিযোদ্ধাদের একগ্রুপের সাথে অন্যগ্রুপের যোগাযোগ, সংবাদ আদান প্রদান করার দায়িত্ব পালন করে মুুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখে।
সামাজিক কর্মকান্ড : মোহাম্মাদ মহিউদ্দিন আব্দুল কাইউম সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রান্তিক এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। বরিশাল উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি বরিশাল অঞ্চলের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ সভাপতি পরে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি ও সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মাদ মহিউদ্দিন আব্দুল কাইউম ইংরেজী অবজারভার পত্রিকার একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক ছিলেন। তিনি বরিশাল প্রেসক্লাবের ১৯৬১-৬৩ মেয়াদে কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারন সম্পাদক ও ১৯৭১-১৯৭৩ এবং ১৯৭৬-১৯৯০ খ্রীঃ মেয়াদে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। আজকের বরিশালে আবদুর রব সেরনিয়াবাদ প্রেসক্লাবের জমি ক্রয়ে আব্দুল কাইউম এর অবদান ছিলো স্মরণীয়।
৮২ বছর বয়সে ২০২০ সালের ২২নভেম্বর করোনায়া আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর সোবাহানবাগস্থ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। স্ত্রী, ১পুত্র ও ২কণ্যা সন্তান সহ অনেক গুনাগ্রাহী রেখে গিয়াছেন।