ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মাত্র ১৩ হাজার রুপি বেতনে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করা এক যুবক বিলাসবহুল গাড়ি ও ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন নিজের প্রেমিকাকে। হর্ষাল কুমার ক্ষীরসাগর নামের এই যুবক বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তবে, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটপাটে জড়িত।
হর্শাল কুমারের বিলাসী জীবন
হর্ষাল কুমার, যিনি মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগরের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তার ১৩ হাজার রুপি বেতনে চাকরি করার পরও কীভাবে বিলাসী জীবনযাপন করতেন, তা নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তিনি বিএমডব্লিউ গাড়িতে চলতেন এবং তার প্রেমিকাকে উপহার দিয়েছেন একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, যার মূল্য কয়েক কোটি রুপি। আরও অবাক করা বিষয় হল, তিনি প্রেমিকার জন্য হীরক-খচিত একটি চশমাও কিনে দিয়েছিলেন।
অর্থ লুটপাটের নিখুঁত পরিকল্পনা
পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে যে, হর্ষাল কুমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করতে একটি নিখুঁত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ই-মেইল পরিবর্তনের জন্য অফিসের পুরোনো লেটারহেড ব্যবহার করে আবেদন করেন। এর মাধ্যমে তিনি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে একটি নতুন ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন, যেখানে শুধুমাত্র একটি অক্ষর পরিবর্তন করা হয়েছিল।
এভাবে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নতুন ই-মেইলকে স্পোর্টস কমপ্লেক্সের অফিসিয়াল ই-মেইল হিসেবে ভুলে সমস্ত লেনদেনের তথ্য শেয়ার করে দেয়। এর ফলে হর্শাল কুমার স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা চালু করতে সক্ষম হন এবং তার পরবর্তী লেনদেনের মাধ্যমে তিনি ২১ কোটি ৬০ লাখ রুপি সরিয়ে নেন।
বিলাসবহুল গাড়ি, এসইউভি এবং মোটরসাইকেল
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে, হর্শাল কুমার একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি, একটি এসইউভি এবং একটি বিএমডব্লিউ মোটরসাইকেল কেনেন। এইসব গাড়ির মূল্য প্রায় ৩ কোটি রুপি। এর পাশাপাশি, তিনি তার প্রেমিকাকে ১ কোটি ২০ লাখ রুপির একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন।
পুলিশের তদন্ত এবং গ্রেপ্তার
পুলিশ জানিয়েছে, হর্শাল কুমারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি এককভাবে এই অর্থ লুটপাট করেননি, বরং তার সহকর্মী যশোদা শেঠী ও তার স্বামী বিকে জীবনকে সহায়তা করার জন্য দায়ী। পুলিশ বর্তমানে হর্শাল কুমারের খোঁজে পলাতক রয়েছে এবং তার বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছে।
মহারাষ্ট্র পুলিশ জানিয়েছে যে, ক্রীড়া বিভাগের একজন কর্মকর্তা আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি জানার পর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এরপরই এই ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং তদন্ত শুরু হয়।
সন্দেহে আরও ব্যক্তির জড়িত থাকার আশঙ্কা
পুলিশ সন্দেহ করছে যে, হর্শাল কুমারের পাশাপাশি আরও একাধিক ব্যক্তি এই অর্থ লুটপাটে জড়িত থাকতে পারেন। তাই, পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিস্তৃত তদন্ত চলছে এবং হর্শালের সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি