২০ টাকার সবজি ১২০ টাকায়! মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেটে চাপে কৃষক ও ক্রেতা
বাংলাদেশে কৃষকের উৎপাদিত ২০ টাকার সবজি ক্রেতার ঘরে পৌঁছাতে গিয়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়! কৃষকরা সঠিক মূল্য না পাওয়ায় লোকসানের মুখে থাকেন, আর ক্রেতারা উচ্চমূল্যে সবজি কিনতে বাধ্য হন।
কৃষকদের অভিযোগ, ফসল বিক্রি করতে গিয়ে তারা ২০-২৫ টাকার বেশি পান না। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার কৃষক আবুল হোসেনের ক্ষেত থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হওয়া লাউ, শহরের বাজারে পৌঁছে ক্রেতার হাতে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। শুধু লাউ নয়, অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ক্ষেতের ফসল বাজারে পৌঁছানোর মধ্যবর্তী সময়ে একাধিক হাতবদল এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
প্রথম ধাপে, কৃষকরা তাদের ফসল স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করেন, যারা এই সবজি গ্রামের বাজার থেকে রাজধানীর বাজারে নিয়ে যান। দ্বিতীয় ধাপে, রাজধানীর বাজারে এসব সবজি আড়তদাররা ব্যাপারীদের কাছ থেকে কিনে নেন। এরপর পাইকাররা কিনে সবজি পৌঁছে দেন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রতিটি ধাপে সবজির দাম বাড়ে।
মানিকগঞ্জের আরেক কৃষক আবেদ আলী বেগুন, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়শ, পটোলসহ কয়েক প্রকারের সবজি চাষ করেছেন। কিন্তু ব্যাপারীদের দেওয়া মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় সঠিক মূল্য পান না।
বিভিন্ন সবজির দাম:
বেগুন: কৃষকের কাছে ৩০ টাকা, ব্যাপারীর কাছে ৪৫ টাকা।
পটোল: কৃষকের কাছে ২৮ টাকা, ব্যাপারীর কাছে ৪২ টাকা।
ঢ্যাঁড়শ: কৃষকের কাছে ৪৫ টাকা, ব্যাপারীর কাছে ৬০ টাকা।
লাউ: কৃষকের কাছে ২০-২৫ টাকা, ভোক্তার কাছে ১২০ টাকা।
আগে মহাসড়কে চাঁদাবাজি মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হতো, কিন্তু বর্তমানে সড়কে চাঁদাবাজি না থাকলেও ফসলের দাম বেড়েই চলেছে। মধ্যস্বত্বভোগী এবং সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিটি ধাপেই মূল্য বাড়ে। কারওয়ান বাজারসহ দেশের বড় বাজারগুলোতে সবজি আসার পর আরও কয়েকবার হাতবদল হয়।
এই প্রক্রিয়ায় সাধারণ কৃষকরা যেমন সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন, তেমনি ক্রেতারা উচ্চমূল্যে সবজি কিনতে বাধ্য হন। ২০ টাকার সবজি বিক্রি হয় ১২০ টাকায়। মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা বাড়লেও, কৃষক এবং ক্রেতা দুই পক্ষকেই ক্ষতির শিকার হতে হয়।