BMBF News

আজ রোকেয়া দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪২তম জন্মবার্ষিকী ও ৯০তম প্রয়াণ দিবস আজ (০৯ ডিসেম্বর)। ১৮৮০ সালের এই দিনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের এক নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এই মহীয়সী নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

 

এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। নারী জাগরণের অগ্রদূতের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসে নারী মুক্তির আন্দোলন বেগবান করার দৃপ্ত শপথে সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। প্রকাশ করা হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার, বুকলেট।

 

আজ শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় দেশের পাঁচজন নারী পাচ্ছেন ‘রোকেয়া পদক’।

 

নারী জাগরণের পথিকৃৎ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কর্ম ও আদর্শকে সামনে রেখে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্তরা প্রধান অতিথির কাছ থেকে সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন। এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা উপস্থিত থাকবেন।

 

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলার মতো রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে রোকেয়ার জন্মস্থানে রয়েছে নানান আয়োজন। রোকেয়া দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১০টায় রংপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পায়রাবন্দে রোকেয়ার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সাড়ে ১০টায় প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী রয়েছে। বাদ জুম্মা রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র সংলগ্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন রয়েছে।

 

এছাড়া পায়রাবন্দে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ওই দিন থেকে পায়রাবন্দে ৩ দিন ব্যাপী মেলা শুরু হবে।

 

দিবসটির আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রধান আলোচক হিসেবে থাকবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা।

 

জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন- সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোখলেছুর রহমান আকন্দ, রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার। এতে আলোচক থাকবেন সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ শাহ আলম। স্বাগত বক্তব্য দেবেন মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জোহরা।

 

অন্যদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি উপলক্ষে সকাল সোয়া ৯টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া চত্বর থেকে শোভাযাত্রা বের করা হবে। সকাল ১০টায় শেখ রাসেল চত্বরে আলোচনা সভা ও প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সরিফা সালোয়া ডিনা।

 

এছাড়া রোকেয়া দিবস ঘিরে পায়রাবন্দে তিন দিনের কর্মসূচির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে শিশু-কিশোরদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা রয়েছে। আরও থাকবে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক প্রমাণ্য চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ এবং রোকেয়া পদক প্রদান। এতে রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আবদুল আলীম মাহমুদ, জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরীসহ বিভিন্ন গুণীজন অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

 

প্রসঙ্গত, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর কোনো প্রচলন ছিল না। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও পরিবারের সবার অগোচরে বড় ভাইয়ের কাছে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি পড়া ও লেখা শেখেন।

 

বেগম রোকেয়ার শিক্ষা লাভ ও মূল্যবোধ গঠনে তার ভাই ও বড় বোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। পরবর্তীতে বিহারের ভাগলপুরে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামীর উৎসাহে ও নিজের আগ্রহে তিনি লেখাপড়ার প্রসার ঘটান। বেগম রোকেয়া ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মারা যান।

 

রোকেয়া সাখাওয়াত ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য রচনা হলো-মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী।

Leave A Reply

Your email address will not be published.