BMBF News

দুই যুগ ধরে বন্যহাতির সঙ্গে যুদ্ধ: নেই সরকারি উদ্যোগ, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

স্টাফ রিপোর্টার:

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যহাতির তাণ্ডবে আমন মৌসুমের পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। এই ধান কাটা মৌসুমে প্রায় প্রতিদিনই মহড়া দিচ্ছে বন্যহাতির দল।

উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও স্থলবন্দর এলাকায় বন্যহাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ কৃষক আব্দুর রহিম (৫০)। তিনি নয়াবিল ইউনিয়নের নাকুগাঁও গারো পাহাড়ের সাতপাকের গোপে ১ একর ২ কাঠা জমিতে দেশীয় আগাম জাতের আমন ধান লাগিয়েছেন। ইতিমধ্যে ধান প্রায় পেকে এসেছে। এই পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কবে যেন বন্যহাতির দল তাণ্ডব চালিয়ে সোনার ফসল খেয়ে সাবার করে দেয়।

আব্দুর রহিম জানান, চলতি আমন মৌসুমে তার পাহাড়ি গোপে ক্ষেত লাগানোর পর থেকেই বাবা ছেলে মিলে বন্যহাতির অত্যাচার থেকে ফসল রক্ষা করতে দিনে-রাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত তার ধান ক্ষেতে বন্যহাতি তিনবার তাণ্ডব চালিয়েছে। ফসল কাটার শেষ মুহুর্তে এসেও থামছে না বন্যহাতির তাণ্ডব। প্রায় প্রতিদিনই পাকা ধান খেতে আসছে প্রায় ৪০/৫০টি বন্যহাতির দল। গ্রামবাসীরা মিলে পাকা ধান রক্ষা করতে ডাক চিৎকার, হৈ-হুল্লোড় করেও মশাল জ্বালিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। হাতির তাণ্ডবের কারণে পাকা ফসল ঘরে তুলতে না পারলে পরিবারের খাদ্যের যোগান কীভাবে দিবেন এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এলাকার কৃষকরা।

আশপাশের জমির মালিক ও স্থানীয় কৃষক কামাল হোসেন, আসকর আলী, আব্দুস সাত্তার, হালিম উদ্দিন ও বর্গাচাষী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষাণী জস্টিন সাংমা, সুচনা মারাক ও প্রমিলা সাংমা জানান, তারা দুই যুগ ধরে বন্যহাতির সঙ্গে যুদ্ধ করে কোন রকমে টিকে আছেন। মাঝে মধ্যেই বন্যহাতির দল আক্রমণ করে তাদের ক্ষতি করে। এ থেকে রক্ষা পেতে তারা টং ঘর তৈরি করে ফসল পাহারা দিচ্ছেন।

সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পানিহাতা, তাড়ানি, মায়াঘাসি, কালাকুমা, নয়াবিল ইউনিয়নের নাকুগাঁও, দাওধারা-কাটাবাড়ি, ডালুকোনা, পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া, খলচান্দা, বুরুঙ্গা-কালাপানি, বাতকুচি ও সমশ্চুড়া পাহাড়ি এলাকায় রোপিত প্রায় ৮০০ একর জমিতে আমন ধান প্রায় পেকে এসেছে। আবার কোন কোন এলাকায় ধানকাটা শুরু হয়েছে।

দুই যুগ ধরে বন্যহাতি তাণ্ডব চালিয়ে এসব এলাকার বাসিন্দাদের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে আসলেও সরকারিভাবে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তবে সম্প্রতি সরকারের বন বিভাগ থেকে বন্যহাতির দ্বারা নিহত পরিবারকে ৩ লাখ টাকা, আহতকে ১ লাখ টাকা ও ফসলের ক্ষতিগ্রস্থকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি আমন মৌসুমে বন্যহাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের তালিকা করে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে সরকারিভাবে ফসলের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এ বিষয়ে আমরা সব সময় সর্তক রয়েছি।

এছাড়া ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ও জানমাল রক্ষা করতে এলাকাবাসীকে আমরা সচেতন করছি।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতি বাড়ি-ঘর ও ফসলের মাঠে তান্ডব চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের বিভিন্ন প্রনোদনাসহ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষক যাতে সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারে সেজন্য হাতি আক্রান্ত এলাকায় আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.