কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর দুমকিতে পায়রা‘র আকস্মিক ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে চার পরিবারের বসত ভিটা। আশ্রয় এখন পাউবির ভেড়ি বাদ। ভাঙ্গন আতংকে ভুগছে আরও অর্ধশতাধিক পবিরার। ভাঙন রোধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে পায়রা তীরবর্তি বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দারা।
গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের কোব্বাত হাওলাদারের ছেলে জাকির হাওলাদারের (৫০), দলিল উদ্দিন ফকিরের ছেলে কুদ্দুস (৫৫), খালেক হাওলাদারের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৭০), মৃত নজরুলের স্ত্রী লাভলী বেগমের বসত:ভিটা পায়রা‘র আকস্মিক ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাংগনের মুখে রয়েছে জাহিদুলের স্ত্রী বিউটী বেগম, মন্নান হাওলাদারের ছেলে জাকিরসহ অন্তত: ১৫/২০টি পরিবার।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন নদীভাংগন এলাকায় গিয়ে এমন ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। পায়রা নদীর স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ভাংগনের সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে বাহেরচর গ্রামের বহু ঘরবাড়ি, গাছপালা, কবরস্থান, মসজিদ, মন্দির, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাংগনের কবলে সহায়-সম্বল হারা গৃহহীন পরিবারগুলো এখন পাউবোর ওয়াপদা ভেরিবাঁধের সরকারি রাস্তার পাশে ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। পুরো বাহেরচর গ্রামে ভাঙনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙনের মুখে নদী তীরে বসবাস করা পরিবারগুলো তাদের সম্বল বলতে বসতঘর ও মালামাল রক্ষায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার পরিবারগুলোর নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাই নিজেদের মালামাল বহন করে কাছের সরকারি রাস্তার ওপর স্তুপ করে রাখছেন। একইভাবে আ. জব্বর খান, বিউটি বেগম, ফয়সাল মিরা, দুলাল হাওলাদার, জলিল সিকদার, ফরিদা, ক্ষীতিশ ঘরামীসহ অন্তত ১৫/২০পরিবার তাদের বসতঘর ভেঙে মালামাল রক্ষায় আগেভাগেই নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর শুরু করেছেন। বাহেরচরের পায়রা তীরবর্তী ভাঙনকবলিত এলাকার সবার চোখেমুখে শুধুই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিগত ৫-৬ বছরে প্রায় শতাধিক পরিবারের ভিটেমাটি, ফসলি জমি, গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাহেরচরের ফজলু মিরার ছেলে মো. মামুন মিরা, ক্ষিতিশ ঘরামীর ছেলে গোপাল ঘরামি, ওসিম ঘরামি, কৃষ্ণ প্রসান্তর স্ত্রী রাধা রাণী, মিলন মিরার স্ত্রী শিল্পী বেগম, ওলিউল্লাহর স্ত্রী মঞ্জু বেগমসহ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পায়রা নদীর ভাঙনে অন্তত দুশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, বাগান, করবস্থান, হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের তেমন কোনো খোঁজখবর নেননি। অসহায় পরিবারগুলোর বেশিরভাগই পাউবোর ওয়াপদা ভেড়িবাঁধের পাশের ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্য শহরে চলে গেছে।
আঙ্গারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো: জিল্লুর রহমান সোহরাব হোসেন নদী ভাঙনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পায়রা নদীর ভাঙনে তার ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যেটুকু অবশিষ্ট ছিল তাও ভাঙতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পরিষদের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, ভিটেবাড়ি ও সহায়-সম্বলহীন পরিবারগুলোকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি সুবিধাও দেওয়া হবে, তবে তা সময়সাপেক্ষ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো: এজাজুল হক বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর সহযোগিতা করা হবে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, ভাংগন এলাকার অদূরে মেন্টেনেন্স প্রকল্পের একটি কাজ চলমান আছে। মেন্টেনেন্স দিয়ে ওখানের বিশাল এলাকার ভাংগন রোধ সম্ভব নয়। ভাংগন রোধকল্পে সমীক্ষা প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে, শীঘ্রই সমীক্ষার কাজ শুরু হবে। সমীক্ষা রিপোর্ট অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।