নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। গত কয়েকদিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।[2] শোকের চিহ্ন হিসেবে সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে এবং নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন।[2] প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, “জাতি আজ তাঁর এক মহান অভিভাবককে হারালো।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হবে। জানাজার সময় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক জানাজায় ইমামতি করবেন। জানাজা শেষে তাঁকে শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরেছেন তাঁর বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মায়ের অন্তিম সময়ে তিনি ও পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের শয্যাপাশেই ছিলেন। উল্লেখ্য, গতকাল সোমবারই (২৯ ডিসেম্বর) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তাঁর পক্ষে তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
১৯৪৫ সালে দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করা বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮১ সালে স্বামী জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি মোট তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীর বিদায় নয়, বরং বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি ঘটনাবহুল অধ্যায়ের অবসান হলো। আজ রাত পর্যন্ত তাঁর মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে এবং আগামীকাল সকালে জানাজার উদ্দেশ্যে সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হবে। জানাজাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।