পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
জন্মের পর রাস্তাটিতে মাটি দিতে দেখিনি মেরামত, সংস্কার ও পাকা তো পরের কথা। মেম্বার-চেয়ারম্যান এর বাড়ির ধারের লোক হইনায় দেইক্কা আমাদের রাস্তা হয় না। একটু বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায় স্কুল কলেজে যাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ ও ভোগান্তির কথা বলছিলেন দিন ইসলাম নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী।
পটুয়াখালী সদর উপজেলাধীন আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মুচির পুল বাজার ব্রিজ থেকে শারিকখালী মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংযোগ সড়ক ও বসাক বাজার মহাসড়কের সংযোগ সড়ক ( Road code = 578955366, 578955269 ) পর্যন্ত অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ মাটির কাচা রাস্তাটি স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পাকাকরণ করা হয়নি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাসহ কালিকাপুর ইউনিয়নের জনসাধারণের।
সরেজমিনে দেখা যায়, মুচির পুল বাজার ব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে শুক্রবারের হাট হয়ে আবদুল স্টান ও শুক্রবারের হাটের পশ্চিম পাশে হাজী করিম রাইচ মিল এর সামনে দিয়ে জবান গাজী বাড়ি (শারিকখালী মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংযোগ সড়ক) পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত সহ চুঙ্গা ভেঙ্গে খালে বাধ সৃষ্টি হয়ে গেছে। জোয়ারের পানি রাস্তার ওপর দিয়ে গড়িয়ে ফসলের মাঠ ডুবে যায় ও বাড়ি ঘরে ঢুকে পরছে। সাম্প্রতিক কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রাস্তায় হাটুর উপরে পানি উঠে গেছে।
বিগত ৮-৯ বছর আগে জবান গাজী বাড়ি থেকে প্রায় মৃধা বাড়ি পর্যন্ত ৩০০ মিটার রাস্তায় ইটের সোলিং হয়েছিল। তাও মেরামত, সংস্কার ও সম্প্রসারণের অভাবে ভেঙে গেছে এবং মাঝে মাঝে পানির গর্ত হয়ে গেছে।
জনসাধারণের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এ রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ চলাচল করে। যার মধ্যে উল্লেখ ৩ ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা এই পথে হয়েই শারীকখালী মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে থাকে।
এছাড়াও রাস্তাটি পাকাকরণ করা হলে মুচির পুল বাজার থেকে আবদুল স্টান হয়ে বসাক বাজার হয়ে পটুয়াখালী চৌরাস্তা,শারিকখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ও বিপরীত দিকে মুচির পুল হয়ে ২ নং বাধঘাট এবং মুচির পুল হয়ে বাদুরা বাজার যাতায়াতে সুবিধা হবে। এককথায় মহাসড়কের সঙ্গে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ মাধ্যম হতে পারে।
জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি নিয়ে শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শারিকখালী মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়,বসাক বাজার ব্যতীত ইসলামিয়া হোসাইনিয়া ময়দান মাদ্রাসা,বড় আউলিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শারিকখালী নূরানী তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসাসহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী সরকারি কলেজের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের রাস্তাটি একমাত্র ভরসা। এই রাস্তাটি পাকাকরণ করা হলে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের উপকার হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি পাকা করার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জোর দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় ৮০ বছরের বয়স্ক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ইউনিয়নে সব থেকে ১ ওয়ার্ড পিছিয়ে আছে। ইচ্ছে করেই চেয়ারম্যান উওর আউলিয়াপুরের মানুষের সাথে এমন করছে। সাবেক চেয়ারম্যান এর বাড়ি এই রাস্তায় তাই আমাদের কোন উন্নতি নাই।
এ বিষয়ে হানিফ মৃধা নামে একজন স্থানীয় বলেন, ১ যুগেও একটুকরো মাটি দেয়া হয়নি,উন্নয়ন বঞ্চিত এ রাস্তাটি পাকাকরণ এখন গন দাবিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন এলে প্রার্থীরা ও রাজনৈতিক নেতারা রাস্তাটি পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন ভুট্টু বলেন, এ রাস্তাটি আসলেই দরকার। একাধিকবার এই রাস্তার কাজ করার জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে জানালেও আগাতে পারিনি। কোনো এক কারণে ১নং ওয়ার্ডটি বাদ পরে যায়। চেয়ারম্যান (এ্যাড. মোঃ হুমায়ূন কবির) হয়তো চায়নি এখানে কোনো উন্নয়ন হোক।
তবে, বিষয়টির অস্বীকার করে আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান- এ্যাড. মোঃ হুমায়ূন কবির বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলো সঠিক নয়। হয়তো রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে। ওই ওয়ার্ডে কয়েকটি (পাকা) কার্পেটিং এর কাজও করা হয়েছে। এছাড়াও, বিভিন্ন প্রজেক্টের আওতায় আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ২৭টি রাস্তার কাজের জন্য এখনো আবেদন করা আছে। কতৃপক্ষ পাশ করলেই কাজ করা যাবে। সেই আবেদনের ভেতরে ১নং ওয়ার্ডের ওই রাস্তাটিও আছে- বলে জানান এ্যাড. মোঃ হুমায়ুন কবির।
এ বিষয় পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হোসেন আলী বলেন, এই সংক্রান্ত সমস্যার কথা এখন পর্যন্ত স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের জানায়নি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।
খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তারপরও আমাদের কাছে স্থানীয়রা আবেদন করলে রাস্তাটি দ্রুত পাকা করারা চেষ্টা করব। এর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।