BMBF News

স্বীকৃতি প্রাপ্ত সকল নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি

১৮
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপিও  নীতিমালা ২০২১ বাতিল করে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষা নন – এমপিও শিক্ষা  প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবিতে  ৮ই জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে  সাংবাদ সম্মেলন করেন নন- এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক মোঃ দবিরুল ইসলাম।

এমপিওভুক্তির দাবিতে বক্তারা বলেন,

দীর্ঘদিন যাবৎ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবীতে ন্যায্য ও যৌক্তি আন্দোলন করে আসছি। বিগত সরকারের আমলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ ও বিশেষ ক্ষমতায় এমপিওভুক্তি হয়েছে। যা আমাদের কাম্য ছিল না। আমরা চেয়েছিলাম সকল স্বীকৃতি প্রাপ্ত নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্ত করণ। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বিভিন্ন সময় মনগড়া নীতিমালার বেড়াঝলে আটকিয়ে দীর্ঘ ২০-২৫ বছর তারও অধিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না করে ধ্বংসের দারপ্রান্তে ফেলে দিয়েছে। যা মানবাধিকার লঙ্ঘন, শ্রম ও নীতিমালার পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পৃথিবীর কোন শিক্ষা ব্যবস্থায় এমপিওভুক্ত নীতিমালা নেই। একাডেমি স্বীকৃতিই এমপিওভুক্তি নীতিমালা। আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমপিওকরণ নীতিমালা একটা অযৌক্তি নীতিমালা।

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টাকে বলতে চাই, নন- এমপিও শিক্ষক ও কর্মচারীদের কষ্টের কথা একবার শুনলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারবেন না। যারা বেতন-ভাতাদী পায়, তারা রাজপথে আন্দোলন করেন বেতন বৃদ্ধির জন্য। তাদের নিয়ে সরকার চিন্তা করে। অল্প বেতনে কিভাবে সংসার চলে। তাদের বেতন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আর যারা দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকুরী করে আসছে, তাদের সংসার কিভাবে চলে একবারও কি ভেবেছেন? দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের আলাদা কোন বাজার নেই। যেখানে তারা বিনামূল্যে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বাজার খরচ নিতে পারবেন। আপনার সামান্য দয়ায় হয়তো নন-এমপিও শিক্ষকরা হৃদয় বিধারক কষ্টের আহাজারী থেকে মুক্তি পেতে পারে।

বিগত সরকারের আমল থেকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করণের লক্ষ্যে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমূখে পদযাত্রা ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে মানববন্ধন সংবাদ সম্মেলন ও গত ২৫/৯/২০২৪ইং তারিখ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার বরাবর একযোগে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চলমান সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির করণের লক্ষ্যে তারিখ প্রধান স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছিল। স্মারকলিপির প্রদানে প্রেক্ষিতে গত ০৭/১০/২০২৪ইং তারিখ  প্রধান  উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তায়েফা সিদ্দীকা, সিনিয়র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাবর বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একাডেমিক স্বীকৃতি এমপিওভুক্তির একমাত্র নীতিমালা করে সকল নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ঘোষণা করতে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়কে অনুরোধ করছি।

ইতিমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ গত ২জানুয়ারী ২০২৫ইং তারিখ এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যারা শিক্ষার্থীদের তৈরী, করেন। তাই শিক্ষকদের সর্বোচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করতে হবে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সমন্বয়কদের বলতে চাই শুধু মর্যাদার কথা বললে হবে না, প্রায় ৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীগণ বিনা বেতনে অতিকষ্টের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্তনাত থেকে বাঁচান। এর সাথে আওয়াজ তুলি স্বীকৃতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির একমাত্র মানদণ্ড।

বৈষম্যের স্বীকার নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারীদের সমস্যাবলী তুলে ধরতে যেমন-

১)এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নন এমপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই সিলেবাস ও পাঠক্রম অনুযায়ী পাঠদান, পরীক্ষা থেকে শুরু করে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীগণ সরকারী অংণ বেতন ভাতাদী সহ সকল সুবিধা পায়। আর নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীগণ সরকারি অংশ বেতন ভাতাদী ও অন্যান্য কোন সুযোগ সুবিধা পায় না।

২) এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীগণ তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করছে। আর নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীগণ ২০-২৫ বছর বিনা বেতনের চাকুরী করে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

৩) এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ সামাজিক মর্যাদা পায়, আর নন এমপিও শিক্ষকগণ সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত।

8) নন এমপিও শিক্ষক কর্মচারীগণ অনেকেই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ মেটানোর জন্য কেউ দিনমজুরের কাজ করছে, আবার কেউ অটো রিক্সা চালাচ্ছে।

(৫) অনেক নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারী সংসারের অভাবে বিভিন্ন এনজিও থেকে খঋণ নিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে, আবার অনেকই আত্মহত্যা করেছে।

৬) বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান ও খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে। আর বাংলাদেশী শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা হচ্ছে না।

৭) দীর্ঘদিন যাবত নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষার মান নিম্নের দিকে চলে যাচ্ছে। তাই কাম্য শিক্ষার্থী, কাম্য পরীক্ষার্থী, কাম্য ফলাফল সন্তোষজনক নয়।

৮) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন নন এমপিও থাকায় অনেক সচেতন অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েদের ভর্তি করাতে চায় না এবং ছেলে-মেয়েরাও ভর্তি হতে চায় না। তাই অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, আবার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর্যায়ে।

একমাত্র দাবী:

০১। স্বৈরাচারী এমপিও নীতিমালা-২০২১ বাতিল করে, স্বীকৃতিই একমাত্র নীতিমালা কার্যকর করে, স্বীকৃতি প্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্ত করতে হবে।

আগামী ২০ কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের দাবী পূরণ না হলে, নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদের যুগপুৎ কর্মসূচি চালু থাকবে।

০১। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর খোলা চিঠি।

০২। কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাত ও সংলাপ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।

০৩। সাংবাদিক সম্মেলন, গোলটেবিল বৈঠক চলমান থাকবে।

০৪। সারাদেশের নন এমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বরাবর লংমার্চ ও অনশন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এমতাবস্থায় স্বৈরাচারী এমপিও ২০২১ নীতিমাল বাতিল করে, স্বীকৃতি একমাত্র প্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালা কার্যকর করে সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি, ভকেশনাল, কৃষি ও ডিগ্রি কলেজ) একযোগে সকল প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তির আদেশ প্রদান করার জন্য মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টাকে সবিনয় অনুরোধ করেন।