ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট, নতুন সরকার গঠন নিয়ে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, সেদিনই ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বিতীয় দিনে তিনি এসব তথ্য প্রকাশ করেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে এই সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন। অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। নাহিদ ইসলামসহ এ পর্যন্ত মামলায় ৪৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
নাহিদ ইসলাম তার জবানবন্দিতে অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে বলেন, “গত বছরের ৪ আগস্ট আমরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করি এবং ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির ঘোষণা দিই। কিন্তু আমরা জানতে পারি, সরকার এই কর্মসূচি ব্যর্থ করতে কারফিউ জারি এবং দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে আমাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে -এমন আশঙ্কায় আমরা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করি।”
তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্ট সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় আসতে শুরু করে। শহীদ মিনার ও চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী শাহবাগ থেকে সরে গেলে এলাকাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আমরা গণভবনের উদ্দেশে মিছিল শুরু করার পরই খবর পাই, গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে পালিয়ে গেছেন।”
নাহিদ জানান, সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে তারা সব রাজবন্দীর মুক্তি এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠনের দাবি তোলেন। তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট জানিয়েছিলাম, কোনো ধরনের সেনাশাসন বা সেনাসমর্থিত শাসন মেনে নেওয়া হবে না।”
জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলিতে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। নাহিদ বলেন, “এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।”
তিনি সব হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎকালীন প্রধানদের দায়ী করে ট্রাইব্যুনালের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।