BMBF News

গণঅধিকার ও এনসিপি: তরুণদের নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে একটি নতুন সমীকরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুটি ভিন্ন পর্যায় থেকে জন্ম নেওয়া দুটি রাজনৈতিক দল—গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে নিবিড় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তরুণদের একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য বলে মনে করছেন দল দুটির নেতারা।

উভয় দলের উত্থানের প্রেক্ষাপট প্রায় একই। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদের জন্ম হয়। ঠিক একইভাবে, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গঠন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। আদর্শিক ও কর্মসূচীগত মিল থাকায় এবং অনেক নেতার রাজনৈতিক পথচলা একসাথে শুরু হওয়ায় এই দুই শক্তি এখন এক ছাতার নিচে আসতে চাইছে।

দলীয় সূত্রমতে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে তরুণদের সমর্থিত প্যানেলের পরাজয় এই একীভূতকরণের আলোচনাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। নেতারা মনে করছেন, তরুণদের মধ্যে বিভক্তির কারণেই নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি, যার সুযোগ নিয়েছে অন্য রাজনৈতিক শক্তি। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জানান, তরুণরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের শক্তি বাড়বে এবং দেশ গঠনে তারা আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে।

তবে এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত একটি দল, যেখানে এনসিপি এখনও নিবন্ধন পায়নি। কীভাবে একটি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে অনিবন্ধিত দল এক হবে, একীভূত দলের নাম কী হবে এবং নেতৃত্ব কাঠামো কেমন হবে—এসব নিয়ে বিশদ আলোচনা চলছে। এনসিপির একটি অংশ চাইছে তাদের দলেই গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা যোগ দিক এবং দলের নাম ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ বহাল থাকুক। অন্যদিকে, একটি সম্মিলিত নেতৃত্ব তৈরির বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে, যেখানে নুরুল হক নূর ও নাহিদ ইসলামের মতো নেতারা শীর্ষ পর্যায়ে থাকতে পারেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পর এনসিপির অবস্থান এবং নুরুল হক নূরের দেশব্যাপী পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে একটি শক্তিশালী বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছে দল দুটি।

যদিও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তবে দুই দলের নেতারাই আলোচনাকে “ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ” বলে অভিহিত করেছেন। যদি এই একীভূতকরণ সফল হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।